দুনিয়ার চাওয়াগুলো সব পূরণ হবে না বলেই আল্লাহ্ জান্নাত নামের কিছু একটা বানিয়ে রেখেছেন। ইচ্ছাপূরণের জায়গা হল ওটা। না পাওয়ার হিসাব কষতে ব্যস্ত হওয়া অকৃতজ্ঞতা নির্দেশ করে, জান্নাতের স্বপ্নের ওপর ধুলোর আস্তরণের কথা জানিয়ে দেয়।
উমার (রা) এক সাহাবীকে মাংস খেতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি মাংস খাচ্ছেন কেন। ঐ সাহাবী বললেন, "মাংস খেতে খুব ইচ্ছা করছিল।" উমার (রা) রাগতস্বরে বললেন, "তোমার সব ইচ্ছা কি দুনিয়াতেই পূরণ করে ফেলবে নাকি?"
এই তো দর্শন, এই তো জীবন, এই তো দুনিয়া, এই তো কারাগার। কারাগারের বন্দী, বালিশে ফুটো দেখে সেটা বদলে দিতে বলে না। মু'মিনের জন্য দুনিয়া হল কারাগার। কী চাইব আমি? চাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই, কেবল তা ব্যতীত যা বিশ্বজগতের প্রতিপালক ইচ্ছা করেন। চাইতে তো পারেন তিনিই।
মানুষের জীবনে কষ্ট থাকে। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট। অপূর্ণতার কষ্ট। এই কষ্টগুলো বাকিরা দেখে না। একজন দেখেন, একজন জানেন। তিনি শুনতে পান। তাঁকেই বলব সব কথা। কেন আর দশজন জানবে আমার আর্তি? কেন ফেসবুকের পাবলিক জগতে এসে জানাতে হবে—আমারও কিছু বলার আছে? কষ্টের সময়গুলোয় হাসিমুখে স্রষ্টার দাসত্ব করে যাওয়া—এই তো সবর।
বিশ্বজগতের শাহানশাহের কাছে জীবন-সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছি সেই কবেই। যেদিন নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করেছি। পারিনি কেবল ক্রেতার হক মেটাতে। বিক্রিত দ্রব্যের ওপর নিজের অনধিকারটুকু মেনে নিতে। তবু আমার রব্ব আমাকে শাস্তি দেননি। সুযোগ দিয়েছেন। দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বপ্ন দেখি আমলনামা ডান হাতে পাওয়ার। বড় দামি সেই স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখি সেই মানুষটার পাশে বসে এক ঝর্ণার পানি খাওয়ার, যিনি আমার জন্য কেঁদেছিলেন যখন আমার অস্তিত্ব ছিল না। ইয়াকুত পাথরের প্রাসাদে বসে এমন একটা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার, যার তুলনা আমার প্রতিপালক দিয়েছেন "প্রবাল ও পদ্মরাগ।"
সূরা আর রহমানে আল্লাহ্ মুত্তাকীদের পুরস্কারের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, "উত্তমের বিনিময় উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে?" এই আয়াতটি যখন অনুভব করি চোখ দুটো ভিজে ওঠে, অন্তর আর্দ্র হয়ে যায়। আমি আল্লাহ্র জন্য একটা ছোট্ট কষ্ট স্বীকার করব, আর আল্লাহ্ সেটাকে লক্ষগুণে বাড়িয়ে প্রতিদান দেবেন না, তাই কি হয়? আল্লাহ্র প্রতিদান তো এমনই হয় যা তাঁর মর্যাদার জন্য উপযোগী। তিনি তো বান্দার ক্ষুদ্রতার দিকে তাকান না, বরং নিজের বড়ত্বের দিকে তাকিয়ে পুরস্কার দেন। অল্প বিনিময় দেওয়া যে তাঁর শানের খেলাফ!
সেদিন যদি হাসতে পারি, আমি তো সফল হয়ে গেলাম। তুচ্ছ দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়ার হিসেব দিয়ে আমার কী এসে যায়, বল?