এক জীবনে মানুষ কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি চায়?

টাকা?

ক্যারিয়ার?

বন্ধন?

ভালোবাসা?

মানুষ সবচেয়ে বেশি যা চায় তার নাম সুখ, তার নাম শান্তি। কোটি কোটি টাকা কামিয়ে বাড়ি-গাড়ি করে কত মানুষ মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছে, পাশে পাচ্ছে না কাউকে। কতবড় ক্যারিয়ার বানিয়ে কত মানুষের শেষ আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রম। কত মানুষ সন্তান না পেয়ে কাঁদে, আর কত মানুষকে সন্তান কাঁদায়। বিলাসবহুল বাড়ির লক্ষ টাকার বিছানায় কতজন শুয়ে এপাশ ওপাশ করে, ঘুম কেড়ে নিয়েছে নিরাপত্তার অভাব। ওদিকে গোলাকার টুকরির মধ্যে মাথা গুঁজে নাক ডাকে দিনমজুর।

কত মানুষকে দেখি সব বুঝেও ইসলাম প্র্যাক্টিস করতে চায় না, ভয় করে এই পথে বুঝি শান্তি নষ্ট হবে। এ পথ নিরামিষ, এ পথে আনন্দ নেই, এ পথে চললে আড্ডা-ফূর্তি ছাড়তে হবে, মন চাইলেই ডানা মেলে ওড়া যাবে না—নাহ! ইসলাম মানলে লাইফটা আলুনি হয়ে যাবে!

আমার হাসি পায়। হাসি পায় ওদের ভ্রান্ত ধারণা দেখলে। যে সুখের আশায় এতকিছু সেই সুখের জন্য কীসের পেছনে ছুটছে ওরা? ইসলাম কি কেবল পরকালে শান্তি দেবার জন্য? দুনিয়ার জীবন কি অশান্ত করতে?

সহপাঠীদের দেখি গার্লফ্রেন্ডের সাথে কমপ্লেক্স রিলেশনের কমপ্লেক্সিতে জর্জরিত হয়ে নানা সমস্যা-দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেয়, আর আমি তখন ভাবনা-চিন্তা ছাড়া ঘুমোতে থাকি-এর চেয়ে বড় শান্তি আর কী হতে পারে?

ক'দিন পরপর ব্রেকআপের সুর, আর প্রোপিকে ছেলেরা কত খারাপ তা জানিয়ে কোটেশান, বয়ফ্রেন্ডের কাছে প্রতারিত হওয়া মেয়েদের চেয়ে ইসলাম পালন করা মেয়েরা কতই না শান্তিতে আছে!

আর ওরা যখন বিনোদন খুঁজতে মিউজিক অন করে, আমরা প্রিয় ক্বারীর কন্ঠে তিলাওয়াত শুনি; যে অপূর্ব প্রশান্তিতে হৃদয় ভরে যায়, সেটা কি মিউজিক দিয়ে কখনো পায় ওরা? মুভিতে অভিনয় দেখে যখন তারা চোখের জল ছাড়ে, কুরআনের ধাক্কা লাগা আয়াত আমার চোখে পানি এনে দেয়, দুটো কি তুল্য?? আল্লাহ্‌র জন্য কেঁদে যে শান্তি, তা কি দুনিয়ার কিছু এনে দিতে পারবে? সারা দুনিয়া চষে সুখ খুঁজে বেড়ানো মানুষগুলো কি কখনো গভীর রাতে অন্ধকারে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে ক্রন্দনের স্বাদ পেয়েছে? কি দিয়ে এই স্বাদ কিনতে চায় ওরা?

আমার একসময়ের এক বন্ধুর বড় আপু ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় লেখিকা। তার লেখাগুলোর বেশিরভাগই নারীকেন্দ্রিক, ছেলেরা কীভাবে প্রেমিকাদের ঠকায়, দাম্পত্য জীবনের নানা সমস্যা ইত্যাদি। ওখানে অনেক নারী মন্তব্য করে প্রেমঘটিত নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিষেদগার করে।

আপু তার বিপুল জ্ঞান-গরিমা দিয়ে নানাপ্রকার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব দেখে আমি মনে মনে একটু সহানুভূতি প্রকাশ করি। বা বলা ভালো করুণা। এত সহজ একটা সমাধান-ইসলাম, তাকে বেছে নিতে না পেরে এই মানুষগুলো তাদের মগজভর্তি বিদ্যাবুদ্ধি খরচ করে নানা বায়বীয় সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে, কাজ হয়না কোনটাতেই।

অথচ যারা দ্বীনের পথে চলতে চেষ্টা করে, তাদের লাইফটা এত কমপ্লিকেটেড না। তারা দুঃখ-কষ্ট নিবেদন করে কেবল আল্লাহ্‌রই সমীপে। তারা সমস্যায় পড়লে সমাধান খুঁজতে সারা দুনিয়া হাতড়ে বেড়ায় না। এক আল্লাহ্‌র দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, সমাধান খোঁজে ইসলামে। তাই শতশত তত্ত্ব আর ফিলোসফি দিয়ে তারা মাথা ভর্তি করেনা, করা লাগে না। কত সহজ, কত শান্তিপূর্ণ তাদের জীবন।

নন-প্র্যাকটিসিং মানুষদের জীবনের জটিলতাগুলো যখন কাছ থেকে দেখি তখন মনে মনে বড্ড কৃতজ্ঞ হই আল্লাহ্‌র কাছে। কত সুন্দর একটা জীবনব্যবস্থাই না দিয়েছেন তিনি। একে যারা চিনতে পারেনা, তারা বৃথা মোহের সাগরে ডুব দিয়ে সুখ কিনতে চায়, সেঁচে আবার খালি হাতে ফিরে আসে। আসবে না ই বা কেন? সুখের যিনি মালিক, তাঁর কাছ থেকেই তো ওরা পলায়ন করেছে। শান্তি তো তাদেরই জন্য যারা আত্মসমর্পণ করেছে এক ইলাহর কাছে।

সমস্ত প্রশংসা সেই প্রভুর জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।