রুবেল বড়ুয়া! চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে আমরা একই সেকশনে পড়তাম। কলেজে ভর্তি হয়েই প্রথমে যে কয়জন ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় রুবেল বড়ুয়া তার একজন। প্রায়ই আমরা একসাথে বসতাম। খুব সুন্দর গানের গলা ছিল তার। কলেজ জীবনের শুরুতেই মিনারের ডানপিঠে এ্যালবামটা খুব জনপ্রিয় হয়। মিনার আমাদের ব্যাচেরই, বি এ এফ শাহিন কলেজে পড়ত। রুবেল বলত ওর মত গলায় সফটওয়ার বসালে এরকম গান আমি গণ্ডায় গণ্ডায় গাইতে পারি। আমার এখনো মনে আছে সে টেবিলে আঙ্গুলের ঠোকা দিয়ে ‘জানি তুই আমার সাথে একলা পথের পথিক হয়ে গাইবি না গান’ গানটা খুব সুন্দর গাইত। কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের মিড টার্মে আমি ফিজিক্সে ফেল করলাম।
কেমিস্ট্রি পরীক্ষার দিন ম্যাথের সঞ্জয় স্যার পাশের জনের সাথে কথা বলেছিল বলে রুবেলের খাতার কিছু উত্তর কেটে দিল। বেচারা কেমিস্ট্রিতে ফেল করল। এরপর একদিন শুনলাম প্রাইভেট পড়তে গিয়ে রুবেল আর বাসায় ফেরেনি, নিখোঁজ! দুই তিন দিন পর তার খোঁজ মিলল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল রুবেলের লাশ! জানি না কি এক অভিমানে, কি এক কষ্টে, কি হতাশায় কিংবা না পাওয়ার বেদনায় রুবেল ছেলেটা সুইসাইড করল। আর আমিও জীবনে প্রথম খুব কাছ থেকে দেখা একজনকে জানলাম যে সুইসাইড করেছে।
ইংরেজি বই পড়তে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা। কিন্তু recently একটা বই পড়ে মনে হল জীবনটা এত সুন্দর কেন। শায়খ আরেফির লেখা 'enjoy your life.' বইটার শুরুতে শায়খ বলেছেন ছোট বেলায় ডেল কার্নেগীর লেখা বই তাকে কি পরিমাণ অনুপ্রাণিত করত। কিন্তু তিনি ভীষণ অবাক হলেন মানুষকে জীবনে সফলতার পথ দেখানো, জীবন উপভোগের কারিকুলাম শেখানো ডেল কার্নেগী নিজেই মরেছেন সুইসাইড করে।
যারা গ্রামে থাকেন বা মাঝে মাঝে গ্রামে যান একদিন সময় করে অন্ধকারে জোনাকি পোকা দেখবেন। দেখে মন হবে ইশ, কি ক্ষমতা এই পোকার! অন্ধকারে আলো জ্বালতে পারে! কিন্তু মজার বিষয়টা হচ্ছে দিনের আলোতে জোনাকি পোকাদের খুঁজে পাওয়া যায়না আর তাদের কথা কেউ মনেও রাখেনা। ঠিক যেমনিভাবে বহু আকাঙ্ক্ষিত জোছনা ছড়ানো চাঁদের কথা দিনের আলোতে কেউ মনে রাখেনা। যাদের দেখে এই দুনিয়ায় আমরা অনুপ্রেরণা খুঁজি, সফলতা খুঁজি, যাদের আমরা রোল মডেল ভাবি সেই মানুষগুলো অন্ধকারে জোনাকি পোকার মত। তাদের সাময়িক আলো দেখে ঈর্ষা হবে খুব কিন্তু সত্যের আলো যেদিন স্পট হবে এই মহামানবরা(!) জোনাকি পোকার মত অর্থহীন হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে! আর এসকল জোনাকি পোকার পেছনে ছুটতে ছুটতে একসময় যখন সত্যের আলো এসে পড়ে, যখন দুচোখের রঙিন পর্দা খসে পড়ে, যখন সামনের অনুকরণীয় মানুষগুলো মরুভূমির মরীচিকার মত ভ্যানিস হয়ে যায় তখন মানুষ দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আশাহত মানুষ তখন জীবনের কোন দিশা খুঁজে পায়না। ‘কি হবে এই জীবনরেখে’, ‘I quit’, ‘বিদায় হে পৃথিবী’ হয় তখন আশাহত মানুষগুলোর সান্ত্বনার সমাধান!
মানুষ যখন কৃতজ্ঞতা, শোকর গোজার, আনুগত্য এই বিষয়গুলো থেকে বিচ্যুত হয় তখন মানুষের ভেতর অহংকার, অবাধ্যতা আর অকৃতজ্ঞতা এসে ভর করে। সে কখনো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখি হয়না। তার শুধু চাই আর চাই। আরও চাই আরও! সাইকেল পেলে বাইক চাই, বাইক পেলে এবার গাড়ী চাই, গাড়ী যখন হল এবার একটা বিএমডব্লিউ চাই। পাশের বাড়ির জরিনারে পেলে এবার আধুনিকা জেরিনের দিকে চোখ! এভাবে চাইতে আর পেতে পেতে একসময় মানুষ চাওয়ার কিছু পায়না। তখন মনে আধ্যাত্মিক কিছু খটকা লাগে। জীবনের কোন উদ্দেশ্য সে খুঁজে পায়না। সে বুঝে উঠতে পারেনা এই পৃথিবীতে সে আসলে কি করছে! সুখের জীবন তখন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় মৃত্যুর দিকে! নিজের তৈরি করা সুখের জীবনে নিজেই বেজার হয়ে অনেকেই বেছে নেয় "আত্মহত্যা!!"
এত সস্তা তোর জীবন? এতই অর্থহীন? পছন্দের মানুষটিকে পেলি না বলে দুইজনই গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়লি? ভাবলি বিরাট কিছু করে ফেলেছিস? আরে বোকা কোন জীবনের উপর অভিমান করছিস তুই তো জীবন কি সেটাই বুঝিসনি! A+ না পাওয়াই আত্মহত্যা করা ছোট্ট মেয়েটার কাছে A+ পাওয়াটাই ছিল সবকিছু! শেয়ার বাজারে লস দিয়ে আত্মহত্যা করা মানুষগুলো! টাকাসর্বস্ব জীবনের গল্পগুলো এর চেয়ে সুন্দর যে হয়না!! খ্যাতির পেছনে ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে উঠা জিয়াহ খান, দিব্যা ভারতী কিংবা মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করা আশাভোশলের মেয়ে! আফসোস! যে জীবনের স্বপ্ন তারা আমাদের দেখায় সে জীবনের কাছে তারা নিজেরাই পরাজিত! মানুষগুলো একবারও ভাবেনা। একবারও ভাবেনা এই জীবনের একটা অর্থ আছে। সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য আছে। একবারও কেউ বুঝতে চায়না জীবন আসলে কি……
ভাগ্য! তাকদীর! দুনিয়ালোভী মানুষগুলোর খুব ক্ষোভ এই তাকদীরের উপর! ভালোকিছু পেলে তো হলই না হলে সব ভাগ্যের দোষ! জীবনে খারাপ কিছু ঘটলে তাকদীরকে দোষারোপ! অমুকের এটা ওটা আছে আমার কেন নেই, অমুক ধনী আমি কেন ফকির ব্লা ব্লা ব্লা! একবার এক দ্বীনি ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। তার ছোট ভাই এসে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাইয়া! মানুষের সবকিছু যদি আল্লাহ নির্ধারণ করে থাকেন, আমি যা করব তার সবকিছু যদি আল্লাহ আগে ভাগেই ঠিক করে রাখেন তাহলে আমি যদি এখন সুইসাইড করি সেটাও তো আল্লাহ ঠিক করেছেন। তাহলে আমার পাপ হবে কেন?” এধরনের প্রশ্নগুলো অমুসলিমরাও সবসময় করে। আর এই প্রশ্নগুলো দিয়ে শয়তান মানুষকে ফাঁদে ফেলে ঈমানকে হালকা বানিয়ে ফেলে। যদি সিম্পল কথায় বলি তাহলে তাকদীরের বিষয়টা আল্লাহ নিজের হাতে রেখেছেন এবং এর ব্যাপারে মানুষকে জানাননি। এটা আল গায়েব- unseen! আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এর সম্পর্কে জানাও সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'য়ালা মানুষের তাকদীর নিজের হাতে রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই হবে কিন্তু মানুষকে পছন্দ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলছেন,
"বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।" [১৮:২৯]
"আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।" [৭৬:৩]
"অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।" [৯১:৮-১০]
বলা হয় যে, আলী (রা) কে একলোক এসে বলছিলো, আমাকে তাকদীর সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, এটা একটা সমুদ্রের মতন, একবার নামলে কুল খুঁজে পাবে না (অর্থাৎ মানুষের পক্ষে সাতার কেটে সমুদ্রের অপর পাড়ে পৌছানো অসম্ভব। তেমনি সীমিত জ্ঞান নিয়ে গায়েব পরিপূর্ণভাবে বোঝাও অসম্ভব।) লোকটি তারপরেও বারবার একই দাবী করতে থাকলো। আলী (রা) তখন তাকে বললেন, তোমার একটা পা তোল। লোকটি এক পা তুললো। তাকে বলা হলো, এবারে আরেক পা তোল। লোকটা বললো, এটা তো সম্ভব না। আলী (রা) বললেন, তোলার চেষ্টা কর ভালভাবে। লোকটি বললো, চেষ্টা করলেও সম্ভব না। আলী (রা) তখন বললেন যে এটাই হচ্ছে তাকদীর।
খেয়াল করার বিষয়, এইটা একটা রিয়েলিটি যে মানুষ যত চেষ্টাই করুক না কেন দুই পা একই সাথে মাটি থেকে ওপরে তোলা তার জন্য অসম্ভব। আবার একটা পাখির জন্য সম্ভব। এখন, আমরা আমাদের সীমিত ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানে যতই চেষ্টা করি না কেন যে জ্ঞানটা (গায়েব) আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের কাছ থেকে আড়াল করেছেন সেটা আমরা কোনভাবেই বুঝতে পারবো না।
এবারে আসি তাকদীর ও ইচ্ছা শক্তির বিষয়ে। প্রথম পা ওঠানোর সময় (১) লোকটির ইচ্ছা শক্তি ছিল, (২) লোকটির চেষ্টা ছিল, (৩) আল্লাহর ইচ্ছা/অনুমতি ছিল। সুতরাং কাজটি করা গেছে। দ্বিতীয় পা ওঠানোর সময় (১) লোকটির ইচ্ছা ছিল, (২) লোকটির চেষ্টাও ছিল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা/অনুমতি ছিল না তাই করতে পারে নি। সব কাজের ক্ষেত্রেই এই তিনটি বিষয় জড়িত। এর মধ্যে তৃতীয়টা যেটা আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে, সেটা নিয়ে কারোরই কিছু করার নেই। আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দেবেন বা পুরস্কৃত করবেন প্রথম দুটোর জন্য। কেউ যখন কোন খারাপ কাজ করছে তখন আল্লাহ তাকে অনুমতি দিয়েছেন খারাপ কাজ করবার, আল্লাহ না চাইলে সে তা করতে পারতো না। তবে এর সাথে তার নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং চেষ্টা জড়িত। সেটার জন্য সে শাস্তি পাবে। ভালো কাজের জন্যও একই কথা।
মোটকথা, তাকদীর আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহর ইচ্ছাশক্তি-জ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারবো না – সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো আমাদের কাজ না, কেননা এটা গায়েব। আমাদের সামনে ভালো ও মন্দ স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। এখন আমাদের ইচ্ছাশক্তি এবং চেষ্টার জন্য আমরা দায়ী থাকবো। সেটা নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে।
আমি প্রায়ই কিছু হলে বলতাম “জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেল।" সেদিন এক বন্ধু কিছু একটাতে হতাশ হয়ে তেজপাতার প্রসঙ্গ আনলে তাকে একটা উপমা দিলাম! যাদের চা বানানোর অভ্যাস আছে তারা জানবেন রঙ চা বানানোর সময় তেজপাতার একটা ব্যবহার আছে সুগন্ধ আনার জন্য। এমনি তেজপাতা খুব একটা সুগন্ধ ছড়ায় না কিন্তু ফুটন্ত পানিতে তেজপাতা ছেড়ে দিয়ে দেখুন তো!! এক মনভরে যাওয়া সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। আমার বন্ধুকে বললাম, দেখ তুই হচ্ছিস আসলেই একটা তেজপাতা! তোর জীবনে দুঃখ আসবে, কষ্ট আসবে, না পাওয়ার হতাশা থাকবে। এসব কিছু হচ্ছে ফুটন্ত পানির মত। এই ফুটন্ত পানিতে নামলে তবেই তো জীবনের সুঘ্রাণ পাবি। জীবনের আসল স্বাদ বুঝতে পারবি। সুবহানাল্লাহ! আমরা তার উল্টোটা করি। কিছু হলেই ধুমদাম ভাগ্যের দোষারোপ। আল্লাহর রহমতের নাফরমানি। আল্লাহর আনুগত্য থেকে অবাধ্যতায় নেমে আসে অহংকারি মন। জীবনটা তো তেজপাতাই, কিন্তু তার সুঘ্রাণ পায় কয়জন??
একদিন বাসায় ঢুকে দেখি আমার মা আর আপু মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে। হঠাৎ টিভি স্ক্রিনে চোখ আটকে গেল। গা শিরশির করে উঠল। একজন মানুষকে শিখানো হচ্ছে কি করে সুইসাইড করতে হবে! একেবারে হাতেকলমে, উপকরণসহ! পরে অবশ্য বুঝলাম ব্যাপারটা তার উল্টো কিন্তু আমরা যদি আমাদের সমাজের সুইসাইড কেসগুলো দেখি তাহলে বুঝব তার বেশিভাগই ফিল্মি কায়দায় সুইসাইড। গল্প উপন্যাস নাটকে আমাদের শেখানো হবে জীবনের উপর অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করা এটা আধুনিক জীবনেরই সংস্কৃতি! ভিলেনের কাছে ধর্ষিত হয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করবে নায়িকার ছোট বোন—এটা বাংলা ছবির অবিচ্ছেদ্য অংশ! জীবন কি এটা শেখানোর আগে আমাদের শেখানো হয় জীবন নাশ কিভাবে করতে হয়। তাইতো ছোট্ট কোন না পাওয়ার অভিমানে ছোটছোট ছেলেমেয়েরা টুস করে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়ে, বিষের বোতল খুলে গিলে ফেলে কিংবা বাসার ছাদ থেকে লাফ দেয়। একটু আধুনিক কায়দায় কাজ সারতে কেউ কেউ আবার দেয়ালে লিখে যায় 3 idiots মুভির দৃশ্যের মত ‘I quit’ কিংবা বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমাপত্র!
মহান আল্লাহ কোন উদ্দেশ্য ছাড়া আপনাকে আমাকে এখানে পাঠাননি। সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন সেই উদ্দেশ্যের কথা,
“আমি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি **শুধুমাত্র** এই কারণে যে, তারা শুধু আমারই ইবাদাত করবে।” [৫১:৫৬]
এছাড়া আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে মানুষের কর্মপন্থা ঠিক করে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন চিরস্থায়ী আবাস জান্নাত ও জাহান্নামের কথা। জীবনের মানসিক প্রশান্তি, আত্মার সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা, ঘুমানো থেকে পায়খানা প্রশ্রাবের আদব সবকিছু রাসুল (স:) আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা আর ইচ্ছেশক্তি আছে। যদি প্রশ্নকরি what is life? তাহলে সিম্পল উত্তরটা হবে birth to death! আর এই birth to death এর মাঝখানের সময়টাতে আছে আমাদের choice! প্রতিটা কাজে, চিন্তায়, উদ্দেশ্যে আমরা কি choose করেছি at the end of the day সেটাই আমাদের জীবনকে define করবে। প্রবৃত্তির পূজা করে জোনাকি পোকাদের দেখানো জীবনের পেছনে ছুটার স্বাধীনতা যেমন আমাদের আছে তেমনি আল্লাহর গোলামী করে আখিরাতের প্রতিশ্রুত পাথেয় সংগ্রহের স্বাধীনতাও আমাদের আছে। Your choice will define your life! তবে আমি আপনাকে বলে দিতে চাই জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কোন এক দুর্বল সময়ে আপনাদের মনে অবশ্যই অবশ্যই প্রশ্ন জাগবে what’s the purpose of life? জীবন কি? কি করছি আমরা এই দুনিয়ায়? যে মানুষটি আল্লাহর গোলামী করে গেছে জীবনভর সে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানে তাই সে হাসিমুখেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। আর যারা এর কোন উত্তর খুঁজে পায়না তাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। মৃত্যু তার দিকে ধেয়ে আসার আগেই অনেক কাপুরুষের কাছে তাই “সুইসাইড” হয় একটা সমাধান!!
নিজেকে সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসে, আত্মকেন্দ্রিক, আত্মভোলা মানুষগুলোর জীবনের দিকে তাকালে দেখবেন সেখানে আসলে সুখ বা স্বাচ্ছন্দ্য বলতে কিছুই নেই। এই লেখাটা লিখতে গিয়েই তাই জীবনে প্রথমবার উপলব্ধি করলাম কেন রাসুল (সঃ) নিজের জান মাল, পিতামাতা, সন্তান সবকিছু থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের শর্ত করে দিয়েছেন! সুবাহানাল্লাহ! আমি রাসুল (সঃ) এর সিরাহ পড়েছি। অনেক সাহাবীর জীবনী পড়েছি, অতীত বর্তমানের অনেক ইসলামী শায়খকে চিনি। আমি এরকম কাউকেই পাইনি যিনি নিজের জীবনের উপর হতাশ হয়ে, দুঃখে কষ্টে অতিষ্ঠ হয়ে, ভাগ্যকে দোষারোপ করে সুইসাইড করেছেন। কারণ একজন মুসলিম আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে বেঁচে থাকে আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে মরে। একজন মুসলিম বিশ্বাস করে যে মানুষ কৃতজ্ঞ চিত্তে আল্লাহর আনুগত্য করে, আল্লাহর জন্য জীবন অতিবাহিত করে আল্লাহ তার সাথে অবিচার করবেন না কোনদিন। একজন মুসলিম জানে আল্লাহর হুকুম পালনেই কল্যাণ আর আল্লাহর হুকুম থেকে বিচ্যুত হওয়াতেই অকল্যাণ।
“… কিন্তু তোমরা কোনকিছু অপছন্দ কর সম্ভবত তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর এবং সম্ভবত কোনকিছু তোমাদের কাছে প্রিয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই ভালো জানেন তোমরা তা জান না।” [সূরা বাক্বারাঃ ২১৬]
বেঁচে থাকতে শিখুন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর রহমত আর হেদায়াত থেকে নিজের জন্য কিছু সংগ্রহ করুন। আল্লাহ যতক্ষন আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ধরে নিন ততক্ষণ আপনার অনেক কিছু করার আছে। প্রচুর অক্সিজেন এখনো আছে নিশ্বাস নেওয়ার। আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহের জন্য কিছু সময় আছে। জীবন শেষ করে দেয়াটাই যদি সমাধান হত তাহলে মানুষের তো জন্ম নেওয়ারই কোন দরকার ছিলনা ভাই। অনেক সময় আসবে যখন জীবনটা অর্থহীন মনে হবে। মনে হবে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। অনেক সময় আসবে যখন চাওয়া আর পাওয়াগুলো মিলবে না। মনে করুন আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্য থেকে আপনাকে বাছাই করেছেন ঈমানের পরীক্ষায়! এখানে জীবনের উপর দোষারোপ করে শয়তানের হাসির পাত্র হবেন না। আপনার স্বপ্নগুলো বড় করতে থাকুন।
পছন্দের মানুষটাকে পাননি বলে সুইসাইড করতে পারেন কারণ আপনি জান্নাতের সুশোভিত বাগানে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে সময় কাটানোর স্বপ্ন কোনদিন দেখেননি। পরীক্ষায় ভালো করেননি বলে, ভালো চাকরিটা পাননি বলে, খ্যাতি আপনার হাতে ধরা দেয়নি বলে সুইসাইড করে মনে করছেন জ্বালা মিটিয়েছেন? আসলে আপনার জীবন ছিল অতটুকুই। আপনি কোনদিন এর বাইরে ভাবতে পারেননি। আপনি কোনদিন আপনার এই জীবনের উল্টোপিঠে আল্লাহর একত্ববাদের, ইসলামের ন্যায়, শৃঙ্খলার জীবনের সৌন্দর্য দেখেননি! রাসুল (সঃ) বলেছেন কখনো নিজের সৌন্দর্য আর ধনসম্পদের পরিমাপ দেখতে চাইলে তোমার চেয়ে নিচের দিকে তাকাবে। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর ভাই। অনেককিছু করার আছে এখানে আপনার। অনেক অনেক কিছু।
জীবনটা শেষ করে দেবেন? তাতে কি আপনার না পাওয়াগুলো পূরণ হবে? আক্ষেপগুলো মিটে যাবে? তার কিছুই হবেনা। যেটা হবে আপনি কোনদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে আর ফিরে আসতে পারবেননা। আর কোনদিন সকাল বেলার রোদ দেখে চিৎকার করে উঠতে পারবেন না। আর কোনদিন ঝুমবৃষ্টিতে হৈ চৈ করতে পারবেন না। আর কোন দিন মন খারাপ করে কাঁদতে পারবেন না। আর কোনদিন প্রিয় স্ত্রীর হাত ধরে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে পারবেন না। আর কোনদিন রমজানের সেহেরি ইফতারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারবেন না। আর কোনদিন ঈদের নামাজ পড়ে বাবা মাকে সালাম করে সেলামি নিতে পারবেন না। আর কোনদিন আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে পারবেন না। আর কোনদিন আল্লাহর কাছে তাওবা করে সিজদায় অবনত হতে পারবেন না। আর কোনদিন আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহে এই পৃথিবীতে ফিরে আসার ইচ্ছে আপনার কবুল হবে না ভাই। কোনদিন না!
কি? ন্যাকামু মনে হচ্ছে? সস্তা আবেগ মনে হচ্ছে?? একবার মরে গিয়ে দেখুন, তাহলেই বুঝবেন এই আবেগগুলো কত দামি! এই আবেগগুলোর মতই দামি আপনার জীবন! আল্লাহর নির্ধারিত সময় ফুরানোর আগেই জীবনের অর্থটা খুঁজে নিন। আর কেউ না হোক মহান আল্লাহ আপনার সাথে আছে। ভালো থাকুন, বাঁচতে শিখুন, জীবনকে ভালোবাসতে শিখুন আর দোয়া করুন, “ইহ্দিনাসসিরাত্বাল মুস্তাকিম—হে আল্লাহ আমাদের সহজ সরল পথে পরিচালিত করুন।”