দৃশ্যপট ১
অমুক তরুণী ধর্ষিত!
প্রগতিশীল আধুনিকমনাঃ ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই!
ইসলামঃ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড!
প্রগতিশীল আধুনিকমনাঃ বলে কি! মৃত্যুদণ্ড?? কল্লাকাটা? ইসলাম একটা বর্বর ধর্ম!
মানবতাঃ আজ মানবতার ঘোর অমানিশা!
দৃশ্যপট ২
প্রগতিশীল আধুনিকমনার বোন ধর্ষিত!!
প্রগতিশীল আধুনিকমনাঃ আমি জাতির কাছে এর বিচার চাই। আমি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই!
ইসলামঃ ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড!
প্রগতিশীল আধুনিকমনাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি এটাই চাই!
মানবতাঃ আজ মানবতার ঘোর অমানিশা!
উপরের দুইটি দৃশ্যপটে বেশ কয়েকটি চরিত্র আমরা খুঁজে বের করতে পারি। ধর্ষক, ধর্ষিতা, প্রগতিশীল আধুনিকমনা—যাদের একমাত্র সমস্যা এবং শত্রু ইসলাম! মানবতা যার মূল কাজ দক্ষিনা বাতাসে উত্তরে হেলে পড়া আর উত্তরের বাতাসে দক্ষিনে হেলে পড়া! নিজে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকুও তার নেই!
গত কিছুদিনের মধ্যে বেশ কিছু চোখে পড়ার মত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে যার পটভূমিগুলো আঁতকে উঠার মত। চট্টগ্রামে আদিবাসী স্কুলছাত্রী গণধর্ষিত, ঢাকায় এক আধুনিকা ভার্সিটি রমণী তাঁর বয়ফ্রেন্ডসহ ১৬ জন দ্বারা গণধর্ষিত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ আর সবশেষে উপমহাদেশে সাড়া জাগানো দিল্লীর চলন্ত বাসে ২৩ বছরের তরুণী গণধর্ষিত! এই বিষয়গুলো প্রচলিত মানবতার চোখ সরিয়ে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করার আর অনুধাবন করার সময় এসেছে।
ধর্ষক, ধর্ষণ, ধর্ষিতা শব্দ তিনটা একসাথে শুনতেই কেমন জানি লাগে! নারীর যে জিনিসটার জন্য একজন নারী আসলেই “নারী” সেটা তাঁর সম্ভ্রম। যুগ যুগ ধরে সংঘাতে, যুদ্ধে আর এই ভোগবাদী কাপুরুষতার সমাজে নারীর এই সম্ভ্রমটুকুই সবার আগে হুমকিতে পড়ে! একজন বা একাধিক কুলাঙ্গার কর্তৃক এই সম্ভ্রম হরণের পুস্তকি নাম “ধর্ষণ” বা “গণধর্ষণ” যেন আজকের সমাজের এক বিশেষণ পদ! যে বিশেষণ ছাড়া সমাজ কল্পনাই করা যায়না। প্রতিদিন পত্রিকা খুলে এরকম সম্ভ্রম হরণের খবর না থাকলে পত্রিকাই যেন অসম্পূর্ণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ধর্ষণ… দোষ কার??
দিল্লীর গণধর্ষণ ঘটনার পর সাড়া ভারতজুড়ে বিক্ষোভের মিছিল। তারা সবাই ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চায়। তবে বিক্ষোভকারীদের একটা অভিযোগ আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার মত। তাদের মতে বলিউডের অশ্লীলতা, আর মিডিয়ায় নারীকে ভোগ্য-পণ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা এই ধরনের ঘটনার পেছনে দায়ী!
আজকের এইরকম এক ঘটনায় প্ল্যাকার্ডে বিক্ষোভের বুলি লিখে রাস্তায় নেমে মানবতার মুক্তির দাবি জানানোর আগে, ধর্ষকের শাস্তি চাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই ধর্ষক তৈরির কারিগরদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। দিল্লীর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন! How funny! অথচ এই অমিতাভ বচ্চনরাই এক ঠ্যাং পরকালে দিয়ে এখনো বিকিনি পরিহিতা কন্যা-সম নায়িকাদের নিতম্ব জড়িয়ে ডিস্কো গানের তালে উন্মাদ নৃত্য দেখিয়ে সাড়া বিশ্বজুড়ে বুড়োদের ভীমরতি বাড়িয়ে চলেছে! আর তারই ফলশ্রুতি পত্রিকায় খবর পড়ে নিজেরই লজ্জা লাগে যখন পড়ি আশি বছরের বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছে সাত বছরের শিশুকে! বলিউডের ছবিতেই নির্জন রাতের বাসে নায়িকাকে বখাটেরা উত্যক্ত করলে, ধর্ষণ করতে গেলে “অজ্ঞাত”(!!) স্থান থেকে সালমান খান শাঁ করে উড়ে এসে তাঁর সিক্স প্যাক বডির জোরে এক ঘুষিতে সবাইকে উড়িয়ে দিয়ে নায়িকাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে! কিন্তু বাস্তবতা এটা নয়! বাস্তবে বখাটেরা “হিরো” বয়ফ্রেন্ডকে বেঁধে নায়িকাকে ধর্ষণ শেষে দুইজনকেই চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। ছবিতে দেখাবে বাস-ট্রাক ড্রাইভারদের দেশি মদ খেয়ে মাতাল হতেই হবে! রাস্তায় একাকী কোন মেয়ে দেখলে কুকাম করার মানসে তাকে গাড়িতে তোলে সালমান খানের মার খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে!! কিন্তু কল্পনার সেলুলয়েডের পর্দা দেখে যারা কুলাঙ্গার হয়, বাস্তবে তারা সালমান খানের জন্য অপেক্ষা করে না! তারা আরামছে ধর্ষণকর্ম সম্পাদন শেষে সমাজেই মিশে যায়! পাপী চোখ ঘুরে বেড়ায় নারী থেকে নারীর শরীরে!
আর তাই ধর্ষকদের তালিকা বানানোর সময় পুরা বলিউডকে এক নম্বরে রাখা উচিত। কিন্তু তা কখনো হবার নয়! সিরিয়াল কিসার ইমরান হাশমি নায়িকার কাপড় খোলাটাকে নাকি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে আর তাই সে মাথামোটা ললনাদের হার্টথ্রব! কেট উইন্সলেট, এনজেলিনা জলি, হেল বেরি, নাতালিরা পর্ণ(!!) ছবিতে অভিনয় করে হাতে তোলে অস্কার! মানবতা হয় নারীর সাফল্যে গর্বিত! আমাদের ঘরে ঘরে সেই অস্কারের মঞ্চে নারীর এহেন জয়গান দেখে চলে করতালি! আর এই পর্ণ(!!) দেখে যৌবনের তাড়নায় অতিষ্ঠ যুবক রাস্তায় সল্পবসনা নারী কিংবা হাতের কাছের গার্লফ্রেন্ড, বান্ধবি, পাশের বাড়ির বৌদির মাঝে সেই তারকাদের নগ্ন শরীর আবিষ্কারে কুলাঙ্গার হলে তখন তারা ধর্ষক! মানবতার অমাবশ্যা শুরু হয় কেবল তখনি! প্ল্যাকার্ডে নারী নির্যাতন বিরোধী সংগ্রামী “সাহিত্য” নিয়ে তারকাদের হাতে অস্কার দেখে হাততালি দেওয়া জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে তখনি! আমরা ধর্ষণ চাইনা…… কিন্তু ধর্ষক বানাই! প্রতিটা দিন আমরা ধর্ষক বানাই! প্রতিটা দিন……
থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারে ফারুকি দেখায় লিভ টুগেদার কত পবিত্র(!!) একটা বিষয়, কত সহজ! আর তিশা বলতে চায়, “এই ছবিতে আমি একজন বাঙ্গালী নারীকে রিপ্রেজেন্ট করেছি”! তাহাদের মতে বাঙ্গালী নারী পুরুষ মাত্রই লিভ টুগেদার করে আর তপুরা কনডম কিনে নিয়ে গিয়ে “mutual sex” করতে না পেরে রাগে ফুঁসতে থাকে! আর এসবে অনুপ্রাণিত আধুনিক পুলা মাইয়া “mutual sex” কে পান্তা ভাত মনে করলে কোন সমস্যা নেই! কিন্তু এইসব দেখে এক কুলাঙ্গার “mutual sex” এর সঙ্গী জোগাড় করতে না পেরে জোর করে কিছু করলে তখনি সমস্যা! তখনই হয় ধর্ষণ! শাস্তি চাই ধর্ষকের! কিন্তু ধর্ষকের কারিগর ফারুকিদের হাতে চাই ভুরি ভুরি পুরস্কার! দেশের মান উজ্জ্বল করতে হবে যে!!
আর আমাদের এই ভোগবাদী সমাজে নারীমুক্তির স্লোগানের আড়ালে নারীরা চিরকালই ভোগের পণ্য! কিন্তু তা আমাদের চিরায়ত আবেগের ফেরীওয়ালী নারীরা কোনদিন বুঝবে না!
না হিজাব করা যাবেনা! হিজাব করলে শিলা, মুন্নি, চাম্মাক চালো, ধুতি কাটিং পায়জামা কে পরবে? হিজাব করলে হট, সেক্সি বিশেষণে তাদের কে বিশেষায়িত করবে?? amazing! hot, sexy, bold এই নোংরা শব্দগুলোই আজ নারীদের যোগ্যতার মানদণ্ড! আর এগুলো পাওয়াই আমাদের নারীদের সোনার হরিণ?? আজকের আধুনিকা রমণী বন্ধু আড্ডা গানে মুখর থাকবে _ সমস্যা নেই! love sex dhuka থিউরিতে বিশ্বাসী যুবক-যুবতি প্রেম করবে, ব্রেক আপ করবে, রিকশা-সিএনজিতে নতুন নতুন সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতা ঝালাই করে নিতে শরীর সওদা করে বেড়াবে—সমস্যা নেই! চারদেয়ালের ভিত্রেও প্রচুর ইয়ে করতে পারবে চাইলে নাকি সেটা ভিডিও করে রাখতে পারবে—এতটুকুতে নাকি কোন সমস্যা নেই!! কিন্তু সেই ভিডিওটা বাজারে বেরিয়ে গেলেই নাকি মূল সমস্যা! তখনই নাকি ধর্ষণের মামলা হয়! তোদের আধুনিকটার ধর্ষণের সংজ্ঞায় আমার ঝাঁটার বারি!! মূল্যবোধ, নৈতিকতা, আত্মসম্মানবোধ এই বিষয়গুলো মানুষের ভেতর থেকেই আসতে হয়। এগুলো এক একটা চেইনের মত যার উপর সমাজ টিকে থাকে। একজন সেই চেইন ভেঙ্গে আরেকজন চেইন ধরে রাখবে এটা আশা করাটা অন্যায়! বক্ষবিদারী আঁটসাঁট পোশাক পরে, তরুণীয় বাঁকগুলো সব উন্মুক্ত করে স্বগর্বে নারী রাস্তায় হেঁটে যাবে আর রাস্তার সব পুরুষ সন্যাসি দীক্ষা নিয়ে পায়ের নখ দেখবে এটা আশা করাটা অন্যায়! সিরিয়াসলি এটা অন্যায়! যে মানুষ নিজের সম্মান নিজে বোঝেনা সে অন্যের কাছ থেকে সম্মান আশা করে কোন যুক্তিতে?? এই কনকনে শীতে চাদর, গরম কাপড় জড়িয়েও আমি থরথর করে কাঁপছি আর আমার পাশেই স্লিভলেস পাতলা কাপড়ের আধুনিকা আরামছে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কোন ভাবলেশ নেই! তবে কি চামড়ার উপরে আধুনিকতার আস্তরণ পুরু হতে পুরুতর হচ্ছে?? এতটাই পুরু যে কোন লজ্জাও আর গায়ে লাগেনা!! নাকি তাহাদের লজ্জায়ও প্রিজারভেটিব দেওয়া আছে??
একসময় আমরা শুধু ধর্ষণের কথা শুনতাম আর এখন একের পর এক শুনছি গণধর্ষণের খবর! এই গণধর্ষণের পটভূমিগুলো কখনো বিচার করেছি আমরা?? চট্টগ্রামে আদিবাসী ধর্ষণের ঘটনার প্রারম্ভ ছিল ঐ মেয়েকে নিয়ে তার বয়ফ্রেন্ড পলিটেকনিক কলেজে প্রেমালাপ করতে যায় সেখানে পলিটেকনিকের কতিপয় কুলাঙ্গার বয়ফ্রেন্ডকে মারধর করে মেয়েটাকে ধর্ষণ করে! ঢাকার এক অভিজাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডসহ তার বন্ধুদের লালসার শিকার হয়ে প্রাণ দেয়! তার কিছুদিন আগে পত্রিকায় এসেছে এক কাপল নির্জন পাহাড়ে পিরিতির গরম কমাতে গিয়েছিল সেখানে ছেলেবন্ধুকে গাছের সাথে বেঁধে মেয়েটাকে গণধর্ষণ করা হয়! ঢাকার আশুলিয়ার বেড়িবাঁধের সুন্দর বিনোদন জায়গা নিশ্চয় অনেকেই চিনেন, অনেকেই হয়তো গিয়েছেনও! সেখানে কাপলদের জন্য একটা সুন্দর ব্যবস্থা আছে! নির্জনে নৌকা ভ্রমণ! ব্যবস্থা খুব সুন্দর—নৌকার ছইয়ের দুইপাশ কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে আর ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া নিয়ে আমাদের ভাবালুতায় মিশে যাওয়া তরুণ-তরুণী সেই বদ্ধ নৌকায়…………!!!! এতে আঁতকে উঠার কিছু নেই! ঘটনা ঘটে এর পরে! নৌকা নির্জনে গেলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নৌকা নিয়ে এসব নৌকায় হামলা চালায়! সবকিছু লুটপাট করে সবশেষে ছেলেবন্ধুকে বেঁধে মেয়েটাকে গণধর্ষণ!! এসব আমার মনগড়া কথা নয়! আমি এর উপর দুইটা পত্রিকার রিপোর্ট পড়েছি! এখন আমরা কাকে কি বলব?? কি দিয়ে শুরু করব?? হারাম সম্পর্কে যেওনা? মেয়েটাকে বলব হিজাব করতে নাকি ছেলেটাকে বলব দৃষ্টি অবনত করতে?? নাকি ধর্ষককে শাস্তি দিলেই সব শেষ?? কখনোই নই! সবগুলো সমস্যার সমাধান না হলে আপনি কয়জন ধর্ষককে শাস্তি দিয়ে এই ধর্ষণ বন্ধ করতে পারবেন??
একজন স্ত্রী, একজন মা হওয়ার বদলে আমাদের নারীদের স্বপ্ন আজ কর্পোরেট ক্যারিয়ার, মডেলিং, অভিনয়-নাচ আবার রাজনীতির মিটিং মিছিলও!! তার মানে কি আমি বলতে চাইছি এসব করা যাবে না?? নারীদের বিরুদ্ধে কথা বলছি?? বোনরে… যে জীবনের স্বপ্ন তোরা দেখিস কিংবা তোদের দেখানো হয় সেখানে অনেক ‘কিন্তুর গল্প” থাকে! ভোগবাদী এই সমাজে নারীরা যেখানে পণ্য সেখানে রুবাবা দউলারা তোদের কর্পোরেট আইডল হয়ে উঠে! কেন বুঝিসনা সেখানে এই আইডলদের যোগ্যতা আর সাদা চামড়ার দাপটের সাথে অনেক “কিন্তুর গল্প” থাকে! রঙ্গিন জীবনের হাতছানি দেখিয়ে গড়ে উঠা শরীর প্রদর্শনীর সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সেখান থেকে পথ দেখানো অভিনয়, মডেলিং জগতের আলো জ্বলমলে জীবনের পেছনে অনেক “কিন্তুর গল্প” থাকে রে বোন! কেন বুঝতে চাস না?? একবার বাজারে সেক্স ভিডিও বেরোনো এবং এর পেছনের গল্প নিয়ে একটা বিশাল সিরিজ রিপোর্ট পড়েছিলাম একটা ম্যাগাজিনে যেখানে অনেক ভিকটিম এর বক্তব্য তুলে ধরা হয়! যাদের প্রায় সবাই জানায় যে তাদেরকে বলা হয়েছিল মিডিয়া জগতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে হর্তা-কর্তাদের সাথে বিছানায় যেতে হবে! আর মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাছে বিছানায় যাওয়াটা অতি ছোট ত্যাগ মনে করা আমাদের আধুনিক মেয়েরা তাই করে!! এই কথাগুলো কখনো আমাদের মিডিয়ায় আসবে না! আমরা কেউ তার খবরও জানবনা! মাঝে মাঝে অরুণ চৌধুরী, একামুল কবির নির্জরের মত কুলাঙ্গার নির্মাতাদের কিছু ঘটনা আমাদেরকে এই সত্যগুলোই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে!! কিন্তু আধুনিকতার ঘুম পাড়ানী গানে নিস্তেজ এই সমাজের মানুষ তা দেখেও, জেনেও না বুঝার ভান করে পাশ কাটিয়ে যাবে! কথাগুলো শুনতে খুব নোংরা লাগছে?? অবিশ্বাস হচ্ছে?? আমাকে মাফ করবেন, এর চেয়ে ভদ্রভাবে আর বলতে পারছিনা!
গণতন্ত্রের, পুঁজিবাদের নোংরা সমাজে স্লোগান একটাই—খাও দাও ফুর্তি কর! সমাজের কুলষিত চিন্তার মানুষগুলো তাই শুরু করেছে সবখানে নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রতিযোগিতা! বিএমডব্লিউ গাড়ির বিজ্ঞাপনে গাড়ির পাশে বিকিনি পরিহিতা নারী! নিচে লেখা drive now!! কাকে?? মেয়েটাকে না গাড়িটাকে? সাবানের প্যাকেটে ঐশ্বরিয়া, বিপাশা বসুদের অর্ধনগ্ন শরীর! ব্যাপারটা এমন যেন প্রতি পিস সাবানের সাথে অর্ধনগ্ন ঐশ্বরিয়া, বিপাশা ফ্রি! পুরুষের পারফিউমের গন্ধে আশাপাশের সব নারী জামা কাপড় খুলে তেড়ে আসা শুরু করবে! আর অবিশ্বাস্য রকম হাস্যকর হিন্দি সিরিয়াল দেখে আবেগে চোখ মোছা আমাদের বোনেরা আরে তাইতো?? নারীদের তো এমনি হতে হবে!!!
হায় হায়! ধর্ষণ নিয়ে লিখতে বসে কোথায় ধর্ষকদের তুলাধুনা করব তা না কত্তেকে কি নিয়ে আসলাম!! ধর্ষকদের তুলাধুনা অনেক হয়েছে my dear huminity! এবার তথাকথিত আধুনিকতা আর মানবতাকে তুলাধুনা করার সময় এসেছে! সমাজের হাতের পুতুল আমাদের বোনদের একটু চোখ মেলে তাকানোর সময় এসেছে! নোংরা আধুনিকতা থেকে বেরিয়ে ইসলামের ছায়ার সমাধান খোঁজার সময় এসেছে! ওমা! বলে কি!! ইসলামের সমাধান?? এই যুগে?? জানি মেয়েদের হিজাবের কথা আসলে, ছেলেমেয়েদের নোংরা আধুনিকতার ভাবালুতা ছেড়ে মূল্যবোধ, নৈতিকতার কথা বললে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কর বললে আমাদের সুশীল সমাজের মানবাধিকার লংঘিত হবে! তাই প্রথমেই দুইটা দৃশ্যপটের কথা এনেছি। এই মানবতা নিজের বিপদেই কেবল সত্যের সমাধান খুঁজবে! সমাজের কথা আসলে ইসলাম হয়ে যায় সেকেলে! মানবতা রক্ষার মাখ মাখ কথামালা এই ধর্ষণ বন্ধ করতে পারবে না! এই মানবতা শুধু মাঝে মাঝে “দৃষ্টান্তমূলক!” শাস্তির আর্তি জানিয়ে চুপ করে থাকবে! চলন্ত পুলিশের গাড়িতে আমাদের ইয়াসমিনরা ধর্ষিত হবে! সঞ্জীব চৌধুরীদের আহ! ইয়াসমিন গান আমাদের আবেগের জোয়ার আনবে, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড হবে কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হবেনা ! প্রতিদিন ধর্ষণ বানিয়ে কয়টা ধর্ষণ তুমি বন্ধ করবে হে মানবতা??
আলহামদুলিল্লাহ মানুষ নিজেরাই ইসলামের সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। দিল্লীর ঘটনায় ভারতের পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় বিজেপি নেত্রী সুষমা ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন! আর এই ঘটনায় ভারতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে যাচ্ছে এমন একটা খবরও পড়লাম! যার কথা ১৯৯৮ সালে ভারতের মন্ত্রী এ কে আদভানি বলেছিলেন যে, ভারতে ধর্ষণের হার বেড়ে যাচ্ছে তাই ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা উচিত যা সে সময় টাইমস অব ইন্দিয়ার শিরোনাম হয়েছিল! দিল্লী ঘটনার কয়দিন আগেই ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের আদর্শ ওমেন কলেজের অধ্যক্ষ মেয়েদের জিন্স, টি শার্ট, আঁটসাঁট পোশাক নিষিদ্ধ করেন! কারণ হিসেবে তিনি বলেন এই পোশাকে নারীদের বেশি উত্যক্ত করা হয়! এইতো সেদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচিত হয়েছে সে দেশে নারীরা শর্টস পরে বাইরে বেরোবে কিনা সে বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। সেখানেও কারণ ছিল এই পোশাকে নারীর প্রতি সহিংসতা! ইনশাআল্লাহ্ সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন মানুষ সমাজে নারীর অধিকার রক্ষা করার জন্য হিজাবের প্রয়োজন অনুভব করবে! যদিও যুগ যুগ ধরে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানকে অস্বীকার করে আধুনিকতা আর প্রগতিবাদের মোড়কে ইসলামের শত্রুরা যে ততাকথিত সমাধানের কথা বলে তা জীবনকে অতিষ্ঠ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি! যে ভারতে আজ ধর্ষণ নিয়ে তোলপাড় সেই ভারতেই কয়েকবছর আগে খুশবু নামের এক অভিনেত্রী বিয়ের আগেই যৌনসম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করে একজন! সেই মামলার ঐতিহাসিক রায় ছিল “ভারতে লিভ টুগেদার বৈধ!” এর ফলটাও যেমন হবার তাই! একটি পরিসংখ্যান বলছে (জাকির নায়িকের লেকচার থেকে, খুব সম্ভবত ৮-১০ বছর আগের) ভারতে ৫০% মেয়ে স্কুল জীবন শেষ করার আগেই তাদের কুমারিত্ব হারায়! আমার কাছে এখনকার কোন পরিসংখ্যান নেই কিন্তু সেই হিসেবটা যে এখন ১০০% এর কাছাকাছি বা ১০০%-ই তা কাউকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর দরকার পড়েনা!
আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই ধর্ষণের সমাধান শুধু ধরে ধরে ধর্ষকদের শাস্তি দেওয়া নয়! ধর্ষণের সমাধান ধর্ষক বানানো বন্ধ করা আর এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে ধর্ষক আর ধর্ষক থাকবেনা, মানুষ থাকবে! তার আগে দরকার ধর্ষণের সংজ্ঞাকে সংজ্ঞায়িত করা! আমার ইচ্ছেমত যা খুশি তাই করব কিন্তু আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হলে তখনই ধর্ষণ এটা ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করেনা! ধর্ষক, ধর্ষণ, ধর্ষিতা, তিনটা বিষয়ের লিংক আপ করে স্থায়ী সমাধানই আসল সমাধান! যেটা লেখার ভেতরে পরোক্ষভাবে বলেছি! সমাজে অশ্লীলতা আর যৌনতা প্রসার করে “ধর্ষক” তৈরি আর নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করে “ধর্ষিতা” তৈরি বন্ধ না হলে শুধু ধর্ষককে শাস্তি দিলেই কোন সমাধান আসবেনা! আর নারী পুরুষের যে চাহিদা থেকে ধর্ষণের চাহিদা তৈরি হয় সেই চাহিদার বৈধতা “বিয়ে” ইসলামের একটি পবিত্র সমাধান! পুরুষ আর নারী উভয়েই আল্লাহকে ভয় করে নিজের নফসকে সংযত করবে। নারী তথাকথিত আধুনিকতায় সাফল্য না খুঁজে মাতৃত্ব আর স্ত্রী-তে সাফল্য খুঁজবে! সমাজ নারীকে এই ক্ষেত্রেই সম্মান দিতে শিখবে। আর তারপরও যে কুলাঙ্গার অবশিষ্ট থাকবে তার জন্য জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ডের বিধান এর ধর্ষণকর্মে সকল কুলাঙ্গারকে বিরত রাখবে ইনশাআল্লাহ্। তারপরও যদি সমাজ ইসলামকে বাদ দিয়ে সমাধান খুঁজতে যায় তাহলে এই লেখায় যে ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছি তার একটাও কেউ কমাতে পারবে না! আমার বোনদের ধর্ষিত হতে হবে! আর কেউ চিন্তাশীলের মত চিন্তা করতে না পারলে আর কিছু বলার নেই! সবাই সুখে থাক! সুখে থাক আধুনিকতার ঘুম পাড়ানী গান, সুখে থাক সান্ত্বনার মানবতা! পারলে সুখে থাক! শুধু জেনে রাখ…… একদিন চোখের পর্দা খুললে কাঁদবি!!