আল্লাহু নূর উস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ – Allah is the light of the heavens and the earth – এই আয়াতের কথা ভাবতে ভাবতে ভর দুপুরে উদাস হয়ে যাই.. পৃথিবীর সংকীর্ণতায় যখন সব খালি লাগতে থাকে, তখন আল্লাহকেই ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, এর মানে কী.. সালমান উতায়বির তিনবার ‘নূরুন আলা নূর’ শুনে হুহু করে ওঠে বুকের ভিতর.. কী যেন করে ওঠে মনটায়.. আকুলি বিকুলি.. বুঝিনা.. আল্লাহ বিশ্বচরাচরের আলো হয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন.. একবার ভাবি জ্ঞানের আলো, আবার ভাবি হয়ত সব শক্তির উৎস.. আতিপাঁতি খুঁজে তাফসির দেখেছি, চোখের সামনে ভাসেনা.. বুকের মধ্যিখানে আসন গাড়েনা.. তাই অপেক্ষায় ছিলাম, নোমান আলি খান কী বলে!
যা শুনেছি, বুক ভরে গিয়েছে। যাদেরই সময় হয়, শুনে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহর নূরের উপমা আমার বুকের মধ্যিখানে গেড়ে বসে আছে। ওসব নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। কেবল বলতে পারি, আলো কে ভালবাসতাম অনেক আগে থেকেই, সূরা নূরের সেই আয়াতের তাফসির শোনার পর থেকে আলো আমার ধ্যান জ্ঞান, বিশ্ব চরাচর হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের সবার বুকের আলোয় তার আলোর ছোঁয়া দিন।
প্রতিটা মানুষ একটি করে আলো ধারণ করেন। সে শুভ্র আলো তার নিষ্পাপ রূহ থেকে প্রজ্জ্বলিত হয়। অনবদ্য সুন্দর সুষমামণ্ডিত সে আলোর ধারক আমাদের এই কায়া, যার সংযোগ ধরণীর সাথে। ধরিত্রীর আয়েশী জীবন তাকে প্রলুব্ধ করে। পার্থিব নানাবিধ সুখের উপকরণ কেবলই সেই বাহককে হৃষ্টপুষ্ট করে। একটা সময় সে ভুলেই যায়, তার দায়িত্ব এক মহান আলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এভাবেই শরীরের প্রয়োজন, জাগতিক মোহ আমাদের অন্তর্গত নূরের ঐশ্বরিকতাকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে ফেলে।
‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সর্বোৎকৃষ্ট রূপে তৈরি করেছি
অতঃপর সে নিকৃষ্ট থেকেও নিকৃষ্টতর হয়ে যায়।’ [সূরা ত্বীন]
এর বিপরীতে আছে নিজ ঐশ্বর্যে দেদীপ্যমান সে অন্তরগুলো – আল্লাহ যাদের তুলনা করেছেন পরিশোধিত জলপাই তেলের সাথে, যেন আলোর উৎসের স্পর্শ পাওয়ার আগেই এক এক জ্বলন্ত দীপশিখা। এই সেই মানুষগুলো, আল্লাহ প্রদত্ত নূর যাদের দেহখাঁচায় বন্দি হয়ে ধন্য হয়েছে। কারণ তারা চিন্তার সৌন্দর্যে, প্রজ্ঞার মাহাত্ম্যে জয়তুন নির্যাসকে শোধনের পর শোধন করেছেন। এদের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ বারবার বলেন, তারাই সফল, যারা সর্বক্ষণ নিজেদের পরিশুদ্ধ করে (সূরা শামস, সূরা মুমিনুন); আল্লাহ, সমস্ত আলোর উৎস, তাঁর অপার মহিমাময় আলোর ছোঁয়া সে অন্তরগুলোর জন্যই নির্ধারণ করে দেন।
আলো বহনকারী সে অন্তরগুলো ঝকঝকে স্বচ্ছ কাঁচের গোলকে উজ্জ্বল সাদা পিদীমের ন্যায়। সে কাঁচে মলিনতা আসলেই সে পরিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়। এমন কাঁচের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করতে ও ছড়িয়ে যেতে এতটুকু অসুবিধে হয়না। সে কাঁচে নেই অহঙ্কার, একগুঁয়েমি, কঠোরতা নামক কঠিন দাগগুলো। নেই আলো গ্রহণ করার পাশাপাশি ছড়িয়ে দেয়াতেও এতটুকু উদাসীনতা। মনে রাখতে হবে, ময়লা শুধু আলো প্রবেশ করতেই বাধা দেয়না, ভেতরের আলো ছড়িয়ে দিতেও বাধা দেয়।
অমন একটি আলোকবর্তিকার সন্ধান পেলে আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা, light of the heavens and the earth, সে অন্তরকে স্পর্শ করেন। সে স্পর্শের কথাই আল্লাহ উপমা দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, নূরুন আলা নূর, light upon light. অনবদ্য সুন্দর এক মন যখন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়, তখন উভয়ের মিলনে সে আলো ছড়িয়ে যায় বহুদূর পর্যন্ত।
আল্লাহর অনুগ্রহে অমন আলোকধারী অন্তরের সন্ধান পেয়েছি অনেক। আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে আজকাল মানুষের সাথে সময় কাটালে তার বুকের আলোটুকু দেখতে পাই। আর দেখি, কত সহজ সে আলোকে উস্কে দেয়া.. আরো একটু উজ্জ্বল করা.. যতবার আল্লাহর এই আলোর উপমা মনে পড়ে, কান্না চাপতে পারিনা। মনের সৌন্দর্যের আলো এত সুন্দর.. তা যেন জ্ঞানের সৌন্দর্যকেও ছাপিয়ে যায়। ও আল্লাহ! তুমি বলেছ, এ উপমা পুরোপুরি তোমাকে তুলে ধরে না। কোনমতে কিছুটা কাছাকাছি যায়। সত্যটা তবে কত সুন্দর আল্লাহ?
মানুষের জন্য কাজ করার, ভালবাসা ছড়িয়ে দেয়ার যে অপূর্ব সুন্দর আকুতি তুমি এই মনগুলোতে প্রোথিত করে দিয়েছ, তাকে আরো একটু উজ্জ্বল করতেই ‘lightbearers’ এর যাত্রা শুরু। তুমি তাদের পথচলায় আলো দেখিয়ে যেও সবসময় ও আল্লাহ!