ইদানিং এই এই চারপাশ, এই ঘুমভাঙ্গা ভোর,
এই মায়ামাখা মায়ের মুখ, বাবার উজ্জ্বল শুভ্র চেহারা,
সবকিছুকে আমার স্মৃতিময় লাগতে থাকে।
স্মৃতিকাতর হয়ে সবাইকে ভালোবাসায় একবার করে ছুঁই,
বন্ধুদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা ছুঁইয়ে দিই,
তারপর “আসি তবে বন্ধু” বলে বিদায় নিয়ে ফিরি।
কেন যেন মনে হয়, যাবার দরজা তো ওই দেখা যায়।
একবার চোখ বুঁজলেই চলে যাওয়া এ ভালোবাসার জগত থেকে
আমার প্রিয় কত নক্ষত্রভরা আকাশ, জোনাকপোকার আলো ঝিলমিল।
আপন করে যা-ই ধরেছি, যাকেই ভেবেছি — সে চলে গেছে তীব্র হয়ে।
কখনো যন্ত্রণায়, কখনো অবজ্ঞা করে। আমি জানি কিছুই থাকে না, কেউ থাকেনা।
সবই হারিয়ে যায়, মাটিচাপা পড়ে, ভেঙ্গে গিয়ে, পুড়ে গিয়ে।
গল্পে পড়া সুন্দরীর আয়ত নয়ন আর পাতলা ঠোঁটের কথা ভেবেও
ভীষণ আকর্ষণ হতো সেই কৈশোরে, চঞ্চল হতো চিত্ত।
অথচ এখন সব বিলবোর্ডের চকচকে পণ্যগুলো দেখলেও কেমন অভক্তি লাগে।
আইফোনের পাশে ব্যাটারির রেডিও যেমন বেখাপ্পা দেখায় তেমনি
এই বিকট উন্মাদনার রাজপথে-ফুটপাথে নিজেকে অযাচিত লাগে।
দু’দিন বাদেই তো উর্বর জৈব সার হয়ে মিশে যাওয়া এই জমিনের বুকে।
তবে কীসের টানে এই অজৈব তরলাসক্তি আর তার জৈব মোহগ্রস্ততা?
প্রিয়জনদের কথা স্মরণেচোখের অশ্রুগুলো ঝরে যায় একফোঁটা দু’ফোঁটা করে।
চলে যেতে হবে, একথা আমার এত তীব্র হয়ে মনে পড়ে কেন?
সবই বদলে যায় একসময়। বদলে যায় ভাই-বোন, বন্ধুরা।
তবু এই বাতাসের গন্ধ, এই হেমন্তের আকাশ, শীতের সকালের হাওয়া
ভোরের শহরের কাকের ডাক রয়ে যায় অকৃত্রিম হয়ে, আগের মতন।
চলে যাবো বলেই আমাকে পাঠিয়েছিলেন আমার মালিক। এই মায়ার বাঁধনে
জড়িয়ে গিয়ে বারবার ভুলে যাই সবকিছু। আবার উদাস হয়ে ফিরি।
এই অদ্ভূত মায়াজালের বিভ্রমে আর কতকাল আন্দোলিত হবো।
আর কতবার লজ্জায় অধোবদন হবো কৃতকর্মের কথা ভেবে।
বিশাল প্রান্তরের জনসমাগমে লজ্জা থেকে ক্ষমা করিয়ো প্রভু,
প্রবল উত্তাপের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করিয়ো। এই ক্ষণকালে চকচকে আলোচ্ছটা
আর বিমুগ্ধ উত্তাপময় সুন্দরে ভুলে ডুবতে চাইনা। চলে যাবো বলেই এসেছিলাম
তাই হয়ত সে ঔদাসীন্যে চিন্তাবিদ্ধ হয়ে কেটে যায় আমার এইসব দিনরাত্রি।
স্বপ্ন-কারখানা, ঢাকা।
প্রথম প্রহর। ২১ নভেম্বর, ২০১১ ঈসায়ী