পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট শব্দগুলো নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে যেমন সেগুলোর ব্যাপারে ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করা যাবে না, ঠিক ইসলামী পরিভাষার ক্ষেত্রেও পাশ্চাত্য কোন টার্ম ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে ইসলামী পরিভাষাগুলোর এমন মর্ম ছড়ানোর অবস্থা তৈরি হয় যেটা আসলে ইসলামি না। ফলে এর আলোকে শরীয়তের এক নতুন ব্যাখ্যার দার উন্মোচন হয়। যা আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তনের শামিল। আমাদের খুব ভাল করে বুঝতে হবে যে, কোন পরিভাষাই নিরপেক্ষ না। প্রতিটি পরিভাষারই ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য ও মর্ম রয়েছে। এজন্য তৃতীয় কোন পরিভাষার ব্যবহার শুধু বোকামিই নয়; বরং ইসলামকে সংস্কারের ( ধ্বংসের) একটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্র।
কোন পরিভাষাকেই তার ঐতিহাসিক ও প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থান থেকে হটিয়ে ব্যবহার অসম্ভব। স্বীয় আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্য কোন আদর্শের পরিভাষায় বয়ান করার অর্থ হচ্ছে সেই আদর্শকে নিজের আদর্শের মাঝে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়া। এমনকি কোন আদর্শের ধারক-বাহক তার পরিভাষাগুলোকে অন্যকোন আদর্শের লোক নিজস্ব অর্থে প্রচার করুক- এটা সহ্য করবে না। যেমন, কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলমান দাবি করে এবং নিজেদের ধর্মকে ইসলাম বলে। কিন্তু আমরা তাদের ধারণার ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করি এবং "কাদিয়ানী ইসলাম" নামক কোন পরিভাষাকে মেনে নিতে মোটেও প্রস্তুত না। বরংচ আমরা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ এবং কাফের বলেই সম্বোধন করি। কারণ গ্রহণযোগ্য মাধ্যম তথা কুরআন, সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমার মাধ্যমে যুগ পরম্পরায় যেই ইসলাম চলে আসছে আমাদের নিকট সেটাই একমাত্র ইসলাম। এর বাইরে অন্য কিছু ইসলাম নয়। এমনিভাবে পাশ্চাত্য শব্দগুলো ও একটা আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। যদি আমরা সেগুলোকে ইসলামি বানাতে যাই, পাশ্চাত্যবিদরা সেগুলোর পরিবর্তিত অর্থ কখনোই মানবে না। তারা আপনার উদ্দেশ্যগত পরিভাষায় আলোচনা করবে- এই আশা করা আত্মপ্ররোচনা ছাড়া কিছুই না।
পশ্চিমাদের প্রতিটি পরিভাষাকে "ইসলামের সম্পত্তি" কিংবা "ইসলামের অতীত" বানিয়ে প্রচার করা মূলত ইসলামী শিক্ষাকে পশ্চিমা চশমায় দেখার ফলাফল। এটা আদর্শিক পরাজয় ছাড়া কিছুই না। চিন্তা করুন, শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে পাশ্চাত্যবিদরা খ্রিষ্ট ধর্মের পরাজয় সাধন করে। কিন্তু তারা এই বিজয় অর্জনের পথে কৌশল হিসেবে কখনোই খ্রিষ্টীয় পরিভাষাগুলো ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের আদর্শিক প্রচার-প্রসারেও স্থান দেয়নি। এমনিভাবে ঔপনিবেশিকরা যখন মুসলমানদের অঞ্চলগুলোর খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, তখন তারা মুসলমানদের মাঝে নিজেদের স্থান করে নেয়ার জন্য "গণতান্ত্রিক খিলাফাত" কিংবা "পশ্চিমা খিলাফাত" এর মত কোন পরিভাষা ব্যবহার করেনি। বরং সর্বত্রই নিজেদের আদর্শিক ও ঐতিহ্যবাহী পরিভাষা "গণতন্ত্র" এর প্রচলন করিয়েছে।
তাহলে মুসলমানরা কেন নিজেদের স্থান করে নিতে এসব পাশ্চাত্য শব্দগুলোর আশ্রয় নিবে? আমাদের এতটুকু সাহস কি নেই যে, আমরা পশ্চিমা পরিভাষাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তার স্থলে ইসলামী পরিভাষা ও তার চেতনা ভিত্তিক মর্মকে প্রসার করব? এটা না পারা আমাদের আদর্শিক পরাজয়ের দলিল। মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে আমরা পরাজিত। রাজনৈতিক বিজয়ের প্রথম শর্তই হচ্ছে চিন্তাযুদ্ধে বিজয়ী থাকা। এটা ছাড়া বিজয়ের কল্পনা করা যায় না।