জানিনা এই লেখাটি কে কে পড়বে। লেখাটা এখন না লিখলেও হতো। তারপরও লিখলাম হয়ত আর কোনদিন লেখা হবেনা ভেবে। কার কেমন লাগবে জানিনা তবে লেখাটা লিখে আমার ভালো লেগেছে। কেমন একটা হালকা হালকা লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ্।
স্কুলের পরীক্ষার কথা প্রায়ই মনে পড়ে। টেনশনে পৃথিবীটা পানসে হয়ে যেত। স্কুলের বেশিরভাগ পরীক্ষাই আমি দিতাম গায়ে জ্বর নিয়ে। এস এস সি পরীক্ষার সময় প্রতিটা পরীক্ষার দিন সকালে নিয়ম করে বমি করতাম। পরীক্ষার সীমাহীন টেনশনে কিছুদিনের জন্য মুমিন বান্দা হয়ে যেতাম। আল্লাহ্র কাছে কত করে চাইতাম পরীক্ষাটা যেন ভালো হয়, প্রশ্ন যেন কমন পরে! আমার পরীক্ষা ভালো হত, রেজাল্টও। এরপর স্বার্থপর মন সব ভুলে যেত। আমার মত হয়ত সব স্টুডেন্টই ভুলে যায় পরীক্ষার জন্য তারা আল্লাহ্র কাছে কত কাকুতি মিনতি করে। আমার নোট বুকে কুরআনের একটা আয়াত লিখে মার্ক করে রাখা আছে। সূরা ইউনুসের এই আয়াতটা দেখে আমার স্কুলের পরীক্ষার কথা মনে পড়ে আর প্রচণ্ড রকম লজ্জা লাগে। আর ভাবি আমার মত অকৃতজ্ঞদের আল্লাহ আয়াতটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন,
“মানুষকে যখন দুঃখ ক্লেশ স্পর্শ করে, তখন শুয়ে, বসে ও দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ ক্লেশ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলে যায়, মনে হয় যেন তাকে দুখ-ক্লেশ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে কখনো ডাকেইনি।……” [১০ঃ১২]
কয়েকদিন থেকে উত্তরায় আছি। বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়ি। নামাজে দাঁড়িয়েই প্রথমে পাশের জনের পায়ের সাথে মিলিয়ে কাতার সোজা করে নিই। একদিন পা মিলাতে গিয়ে দেখি আমার ডান পায়ের পাশে কোন পা নেই। অবাক হয়ে দেখি আমার পাশের ভদ্রলোক এক পা নিয়ে জামাতে দাঁড়িয়েছেন। তার বাম পা কোমর থেকে কাটা। সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবর। জামাতে সামনের কাতারে অনেকেই বয়সের ভারে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে আর ইনি এক পা নিয়েও দাঁড়িয়ে আছেন। পুরো নামাজে দেখছি কত কষ্ট করে এই মানুষটি নামাজ পড়ছে। তার তাক্বওয়া দেখে, এই ভয়ংকর অঙ্গহানির পরও মহান আল্লাহ্র প্রতি তার কৃতজ্ঞতাবোধ দেখে মনটা এতটুকু হয়ে গেল। আরেকদিন হলের মসজিদে নামাজ পড়ছি দেখি আমার পাশের জন কেমন জানি বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাতার থেকে একরকম বেরিয়ে গিয়ে নামাজ পড়ছে। খুব বিরক্ত লাগছিল দেখে। কিন্তু সালাম ফিরিয়ে দেখলাম ছেলেটা অন্ধ। কৃতজ্ঞতায় মনটা ছোট হয়ে গেল।
এই মানুষগুলো আমাদের মত সুস্থ নয়। আল্লাহ এদেরকে অনেক কিছু দেননি যা আমাদের দিয়েছেন। কারো হাত নেই, পা নেই, কারো চোখ নেই। আল্লাহ্র বিচারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার মত অনেক যুক্তি এদের কাছে আছে। কিন্তু অভিযোগ না করে সেই মহান রবের প্রশংসায় সিজদাবনত হতে দেখে এত ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার দুইটা পা আছে। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি দুই পায়ে ভর দিয়ে নামাজে দাঁড়াতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার এক জোড়া জুতা। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি দোকান থেকে পছন্দ করে বেছে বেছে পায়ের মাপে স্যান্ডেল কিনতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি দুই পা ভাঁজ করে আরামে বসতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার দুইটা চোখ আছে। আমার আছে সাতটা রং। আমি কিছু দেখে আবেগে আপ্লুত হতে পারি। আমি সুন্দর দেখতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ্।
আপনি কেন মহান আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না? একবার নিজের শরীরের দিকে তাকান। শরীরের প্রতিটা অঙ্গের কথা চিন্তা করুন। চোখের পাপড়ি দেখে কী মনে হয়? শরীরের ওজনের তুলনায় .০০০০০০০০০ something হবে এর ওজন। এগুলা না থাকলেই কি!! কিন্তু কেটে ফেলে দিয়ে দেখুন তো?? এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকবেন। ঘুমাতে পারবেন না, চোখ বন্ধ করতে পারবেন না। কারণ অতি নগণ্য এই জিনিসটা চোখের দুই পাতার মধ্যে চেইনের মত কাজ করে। চোখ বন্ধ করলে এরা মাঝখানে চেইনের মত দুই পাতাকে আঁকড়ে ধরে। চিন্তা করুন মহান আল্লাহ আপাতদৃষ্টিতে অতি নগণ্য মনে হওয়া এই জিনিসটিও আপনার জন্য যত্ন করে বানিয়েছেন। দুইটা সুস্থ সবল হাত, হাতের দশটা আঙ্গুলই ঠিক। কিন্তু ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলটা স্কচ টেপ দিয়ে আটকে রাখুন তো!! শার্টের বোতামটাও লাগাতে পারবেন না। বউকে ডাকতে হবে বোতাম লাগানোর জন্য। কৃতজ্ঞতা starts from here my dear brothers. এখান থেকে কৃতজ্ঞতায় আপনার বুকটা ভরে যাওয়া উচিত। সিজদায় পড়ে চোখের পানি ছেড়ে দেওয়া উচিত। কৃতজ্ঞতা starts from here, just here_________
আলহামদুলিল্লাহ্ শব্দের অর্থ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার।” দ্বীন ইসলামের খুঁটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরার জন্য যে কয়টা বিষয় অত্যাবশ্যকীয় তার একটি “কৃতজ্ঞতা”। কৃতজ্ঞতা ছাড়া আপনি একজন ঈমানদার হতে পারবেন না, মুমিন হতে পারবেন না। কখনোই না। কেন পারবেন না তা একটা ছোট্ট সিকুয়েন্স দিয়ে বলি। অন্তরের কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে আনুগত্য আসে, আর আনুগত্য থেকে আসে সমর্পণ। এটাই তো ইসলাম! বান্দা তার রবের প্রতি অনুগত থেকে নিজের ইচ্ছাকে তাঁর নিকট সমর্পণ করবে। so that’s the reason একজন মুসলিমকে কৃতজ্ঞ হতে হয়। একজন মুমিনকে কৃতজ্ঞ হতে হয়। জান্নাতের স্বপ্ন দেখা প্রতিটি ঈমানদারকে কৃতজ্ঞ হতে হয় মহান আল্লাহর কাছে। অন্তর থেকে আসতে হয় “আলহামদুলিল্লাহ্ for everything.”
আপনি! যে মুসলিম ভাই এই লেখাটা পড়ছেন আপনি জানেন না আপনি কত ভাগ্যবান। আল্লাহ আপনাকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর অনুসারী বানিয়েছেন। শুধু শুধুমাত্র দয়া করে। যে মানুষটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারে, যে মানুষটি প্রতিটা মুহূর্তে মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে, বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, সে মানুষটি কি জানে সে কত ভাগ্যবান? আল্লাহ কত কত দুর্ভাগা মানুষের মাঝখান থেকে এই মানুষটিকে আল্লাহ্র কৃতজ্ঞ বান্দাদের সাথে শামিল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি যে ভাগ্যবান এটা বুঝতে পারাটাও একটা রহমত। সেই রহমতের জন্যও আপনার বলা উচিত আলহামদুলিল্লাহ। আমরা তিনবেলা ভালো খেতে না পেরে আক্ষেপ করি আর রাসুল (সাঃ) সহ তাঁর সাহাবীরা পেটে পাথর বেঁধে থাকতেন। আপনার খুব দামি ব্র্যান্ডের জুতা নেই কিন্তু আপনার জুতা পরার দুইটা পা আছে, কারো হয়ত সেটাও নেই। আপনার খুব ভালো, দামি কাপড় নেই কিন্তু স্মরণ করুন আবু যার গিফারির (রাঃ) এর মত সাহাবী, হজরত হামযা (রাঃ) এর মত বীর শহীদ দের কবরস্থ করার সময় এক টুকরো কাফনের কাপড়ও ছিল না! আপনার হয়ত খুব সুন্দর একটা ফ্ল্যাট বাড়ি নেই কিন্তু হজরত আলী (রা) এর মত মানুষও মাঝে মাঝে শুধু মাটির উপর শুতেন। আর এই দেখে একদিন রাসুল (সাঃ) তাকে সম্বোধন করেন, “ইয়া আবা তুরাব__ ওহে মাটির অধিবাসী প্রাকৃতজন।”
খুব সুন্দরী বউয়ের শখ ছিল, তাইনা?? আপনার বউটা হয়ত অত সুন্দরী নয় কিংবা দেখতেও হয়ত ভালো নয় কিন্তু সে হয়ত একজন মুমেনা! সে পর্দা করে, আল্লাহর দ্বীন পালন করে, আপনাকে আল্লাহর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসে। ফজরের সময় আপনাকে ডেকে দেয়। আপনার সন্তানকে সে দ্বীন শিক্ষা দেয়! হা করে বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে না! সংসারের শত অভাব অনটনের সময়ও সে ধৈর্য হারায় না। দামি গয়না গাটির বায়না ধরেনা। সে জান্নাতের স্বপ্ন দেখে আর আপনাকেও স্বপ্ন দেখায়। কত্ত বড় রহমত আপনার প্রতি আপনি কি কখনো অনুভব করেছেন?? কখনো কি এই বিশাল রহমতের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হয়েছেন?? আমার কাজিনের একটা বাচ্চা হয়েছে সদ্য! কি যে আদর লাগে মাশাআল্লাহ! ছোট বাচ্চা এই প্রশ্রাব করে, এই পায়খানা করে আর তার মা তা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে। এতে যেন এক ধরনের আনন্দ তার। আপনারও ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাইনা?? আপনার স্ত্রীও এক বুক মমতা নিয়ে বাচ্চার পায়খানা-প্রশ্রাব পরিষ্কার করতে পারে, আপনি বাচ্চার জন্য খেলনা কিনে কিনে ঘর ভর্তি করে ফেলতে পারেন, তার তুলতুলে গালে গাল ঘষে আদর করতে পারেন, অসুস্থ হলে টেনশনে ছোটাছুটি করতে পারেন, বারান্দায় হেঁটে হেঁটে গুনগুন করে বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ্ আপনার আশেপাশেই অনেক মানুষ দেখতে পাবেন আল্লাহ এদের কোন সন্তান দেননি। আপনাকে দিয়েছেন। শুধুমাত্র দয়া করে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞ হয়েছেন মহান আল্লাহর কাছে?? চোখের পানি ফেলেছেন কোনদিন?
এদেশের অবস্থা খুব খারাপ?? এদেশে কেন জন্ম নিলেন?? আক্ষেপ হয় কি?? তাহলে কিছু মানুষের গল্প শুনুন। সোমালিয়ার মানুষ খেতে না পেয়ে মারা যায়। ফিলিস্তিনের মানুষগুলোর কাছে এতটুকুও নিশ্চয়তা নেই যে তাদের স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েরা সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফিরবে। আফগানিস্তানের মানুষ বছরের পর বছর আমেরিকানদের বন্দুকের তলায় মাথা নিচু করে জীবন পার করে দিচ্ছে। ইরাকের মা বোনদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করা হয়। আপনি ভালো আছেন আলহামদুলিল্লাহ্। তিন বেলা খেয়ে এখনো পর্যন্ত আরাম করে ঘুমাতে পারেন।
মাঝে মাঝে ভাবি একটা কম্পিউটার থাকলে পুরা কুপাই ফেলতাম। লেকচার, ইসলামি বই, সাইট ঘেটে ঘেটে একেবারে শায়খ হয়ে যেতাম। আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ আমার জন্য এটাই চেয়েছেন। কম্পিউটার থাকলে হয়ত দ্বীন থেকে বিচ্যুত হতাম। জাহিলিয়াতে ডুবে যেতাম। হলে উঠে গণরুমে থাকতাম। কি কষ্ট!! ঘুমানোর কষ্ট। ভালো করে পিটটা রাখার ও জায়গা নেই। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ আমার জন্য এটাই চেয়েছেন। আমার চারপাশের বন্ধুগুলো জাহিলিয়াতে ডুবে আছে, তাদের মত নই বলে আমি গোঁড়া, অনেকের কাছে আনস্মার্ট, গায়ে এক তোলা মাংশ নেই, দেখতে ভালো নই, চারপাশে তিন চারটা মেয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটতে পারিনা। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ আমার জন্য এটাই ফয়সালা করেছেন। আমি স্বপ্ন দেখতে পারি, আমি চিন্তা করতে পারি, কোনটা ভালো কোনটা খারাপ বুঝতে পারি, আবেগের বশে ভুলটা করে ফেললে ক্ষমা চাইতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ্, সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর।
আমরা আমাদের বাবা মায়েদের কাছে কৃতজ্ঞ। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। সেই বিষয়টা এখানে নয় অন্য কোন দিন আলাদা একটা লেখায় লিখব ইনশাআল্লাহ।
আমার এক ফুফাত ভাই ডাক্তার। আমাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে আমাদের খুব একটা যাওয়া আসা নেই। কেবল কোন কারণ দেখা দিলেই যাওয়া আসা হয়। আর আমার ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় আমরা যে দুই ভাই এক বোন এটা আমার সব আত্মীয় স্বজন জানে কিনা। আমার এক ঘরে স্বভাবের জন্য অনেকে আমাকে চিনেই না। কিন্তু এক আশ্চর্য কারণে আমার ফুফাত ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে অত্যধিক পছন্দ করেন। আমার এই ছোট্ট জীবনে আমি যে কয়জন মানুষের কাছে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞ তার একজন এই মহিলা। স্কুল জীবনে আমার খাতা কলমের সবকিছু উনিই দিয়েছেন। কলেজে উঠার আগ পর্যন্ত আমার পরনের প্রায় কাপড়ই উনার দেওয়া। আমার স্বাস্থ্য খারাপ বলে উনি আমার জন্য হরলিক্স, কেক, বিস্কিট এসব আলাদা করে পাঠাতেন আর বলতেন, খবরদার আর কাউকে দিবি না শুধু তুই খাবি!! আমার হাত ঘড়ি, টেবিল ঘড়ি, এমনকি চায়ের মগটা পর্যন্ত উনি আমার জন্য পাঠাতেন। যতবার উনার সাথে দেখা হয় আমার হাতে পাঁচশো এক হাজার টাকা গুঁজে দেন। আমার কোন পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে সবার আগে উনি ফোন করেন। এই লেখাটা হয়ত উনি কোনদিনও দেখতে পাবেন না। কিন্তু আমাদের অভাবের সংসারে উনি আমার খরচের অনেকটাই বহন করেছেন এটার জন্য নয় সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে উনি সেই ছোটবেলা থেকে আমার জন্য যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আমাকে নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, আমার সাফল্যে আনন্দিত হয়েছেন, ভুল করলে বকা দিয়েছেন এই জন্যই আমি কৃতজ্ঞ। এই মহিলার দিকে আমি কোনদিন চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলিনি। আমার মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ আমার আছে উনার প্রতি সেটা কোন অংশে কম নয়। কেন?? কারণ কৃতজ্ঞতা! আমার অন্তর তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে শ্রদ্ধাবোধ এসেছে, ভালোবাসা এসেছে। মানুষ যখন কৃতজ্ঞ হয় সেই কৃতজ্ঞতা থেকে আরও অনেক সুন্দর কিছু উৎসারিত হয়।
আমার গ্রামে পাড়ার এক বড় চাচি আছেন তার বাড়িতে যদি কোনদিন গরুর মাংশ রান্না হত উনি নিজে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যেতেন। যতক্ষণ না আমার খাওয়া হয় আমার পাশে বসে থাকতেন। ছোটবেলায় সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কিছুই বুঝিনি। আজ কৃতজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বসে উনার কথা মনে পড়ছে। এই মহিলাকে একদিন নিজের টাকায় গরুর মাংস খাওয়ানোর ইচ্ছা। কিংবা আল্লাহ যদি আমাদের দুইজনকে জান্নাতে মিলিয়ে দেন তবে আমার ঘরে উনাকে গরুর মাংসের দাওয়াত দেব। জান্নাতের সেই দাওয়াত নিশ্চয় এই পৃথিবীতে আমার প্রতি উনার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অসাধারণ প্রতিদান হবে। আমি ঢাকায় এসে যে পরিবারটির ভালোবাসা পেয়েছি সেখান থেকেও স্বতঃস্ফূর্ত কৃতজ্ঞতা আসে। আমার সেই চাচা আমাকে নিজের সন্তানের মত দেখেছেন। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তির টাকা দিয়েছেন। যখন যে কোন মুহূর্তে, যে কোন বিপদে উনারা আমার পাশে থাকেন। এখন যেমন আছেন। এই যে ফেসবুকে আরাম করে নোট লিখছি, খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ অনেক মানুষের ভালোবাসা আমাকে দিয়েছেন। সেই ভালোবাসা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই এখন যখন একটু দ্বীন বুঝেছি মহান রবের কাছেই প্রতিদিন দোয়া করি তিনি যেন তাদের উত্তম প্রতিদান দান করেন। আমি সবার কাছেই কৃতজ্ঞ আর সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ মহান আল্লাহ্র কাছে যিনি এই কৃতজ্ঞতার উত্তম প্রতিদান দিতে সক্ষম।
আপনি যে মুসলিম বিশ্বাস করেন মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব। যে বিশ্বাস করেন সবকিছুর ফয়সালাদানকারি মহান আল্লাহ আপনি তাঁর উপর আস্থা রাখবেন, বিপদে ধৈর্যধারণ করবেন। ভালো কিছু না পেলে ধরে নেবেন এর চেয়ে ভালো কিছুর জন্যই আল্লাহ আপনাকে আখিরাতে উপস্থিত করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনি এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। যার পরীক্ষা যত কঠিন তার পুরস্কারও তত বেশি, তত উত্তম। মহান রবের দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন, আখিরাতের দিকেই আমাদের দৃষ্টি। অনন্ত জান্নাতের আশা বুকে লালন করেই আমাদের বেঁচে থাকা। থাকুক না এপারের অপূর্ণতা, ব্যর্থতা, আক্ষেপ। ওপারে আল্লাহ্র কাছে চেয়ে নেব।
একবার এক সাহাবী খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছু সাহাবী উনাকে দেখতে গেলেন। তার শয্যাপাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কেমন আছেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ্।” তার উত্তর শুনে উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেন, “আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি কারো কাছে সে কেমন আছে জানতে চাইলে সে যদি উত্তরে বলে আলহামদুলিল্লাহ্ তবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (হাদিসের মূল থিমটা বলেছি। এই হাদিসের ব্যাখ্যা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। খুব সম্ভবত ছ্বগিরা গুনাহের কথা বলা হয়েছে। আর এটা কাদের জন্য প্রযোজ্য এটাও একটা প্রশ্ন। সারাদিন আকাম কুকাম করে দিন শেষে কেউ কেমন আছে জিজ্ঞেস করলে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে দিয়ে সব গুনাহ সাফ করে দেব এই নিয়ত-ধারীদের জন্য ইনশাআল্লাহ এই সুসংবাদ প্রযোজ্য হবে না। Allah knows the best)
আবু যার গিফারি (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী। একদিন এক ব্যক্তি আবু যারের নিকট এল। সে তার ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল। গৃহস্থালির কোন সামগ্রী দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আবু যার, আপনার সামান পত্র কোথায়?’ আবু যার উত্তর দিলেন, _ ‘আখিরাতে আমার একটি বাড়ি আছে। আমার সব উৎকৃষ্ট সামগ্রী সেখানেই পাঠিয়ে দিই।’
আলহামদুলিল্লাহ্। আমি ভালো আছি, সুখে আছি। অন্য অনেকের চেয়ে আল্লাহ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। অনেক ভাল রেখেছেন। অনেকের মধ্য থেকে আমাকে এই বুঝ দিয়েছেন আমরা মুসলিমরা আখিরাতের জন্য বাঁচি। আলহামদুলিল্লাহ্।
সেমিস্টারের সি জি পি এ খুব একটা ভালো না। আল্লাহ আমার জন্য এটাই চেয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ্। কী খাব, কী পরবো, কী চাকরী করব, কত বেতন পাব এসব ভাবি না। আল্লাহ আমার জন্য যা দেবেন সেটাই। যদি কিছু নাই দেন তারপরও আলহামদুলিল্লাহ্, আখিরাতে চেয়ে নেব। তবে, এর মানে হাত গুটিয়ে বসে থাকা না।
সবাই আমাকে ভালোবাসবে না। কেউ ঘৃণা করবে, কেউ পাত্তা দেবে না, কেউ অপমান করবে, কেউ ভুল বুঝবে। আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন কিন্তু আমি সবাইকে আল্লাহ্র জন্যই ভালোবাসবো, আল্লাহ্র জন্যই ঘৃণা করব। ওপারের জন্যই আমাদের বেঁচে থাকা। আকাশের ওপারে আমার একটি বাড়ি আছে। লাল নীল হীরার বাড়ি। আকাশের ওপারে আমার সাথী আছে, জানতেও চাইনা সে কেমন, আল্লাহ ভালো জানেন। আকাশের ওপারে আমার রব আছে। তাঁর জন্যই আমার এই অশ্রুসিক্ত অপেক্ষা। আলহামদুলিল্লাহ্। আলহামদুলিল্লাহ্ for everything….
February 11, 2014