সুইযারল্যান্ড মুসলিম ছাত্রদের জরিমানা করা শুরু করে ২০১৬-তে। তাদের অপরাধ? শিক্ষিকার সাথে হাত মেলাতে অস্বীকার করা। এই ‘গুরুতর’ অপরাধের কারণে মুসলিম ছাত্রদের ৫০০০ ডলার পর্যন্ত ফাইন করার আইন হয়।
আচ্ছা, মানুষকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আরেকজনের শারীরিক সংস্পর্শে আসতে বাধ্য করা কি একধরনের যৌন হয়রানি না? নারীবাদীরা তো ক্রমাগত পারস্পরিক সম্মতির গুরুত্ব নিয়ে চেঁচামেচি করে, কিন্তু এ বিষয়ে তারা মুখে কুলুপ এঁটে রইল কেন?
পশ্চিমা বিশ্বে এমনও মহিলা আছে, কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে না হাসলে যারা রীতিমতো অপমানিত বোধ করে। এটা নাকি অপমান, অশ্রদ্ধা! কী অদ্ভুত! তুমি যে ধরনের সামাজিক রীতিনীতিতে অভ্যস্ত কোনো কিছু সেটার সাথে না মেলা মানেই সেটা অশ্রদ্ধা? অপমান?
পশ্চিমারা একদিকে সহিষ্ণুতা, বহুত্ববাদ আর বৈচিত্র্যকে সম্মান করার কথা বলে। অন্যদিকে কোনো মুসলিম তার ধর্মের বিধান মেনে চললে সেটাকে অসহিষ্ণুতা বলে গলা ফাটায়। একজন মুসলিম আদৌ অসম্মান করতে চাচ্ছে কি না, সেটা ধর্তব্য না। আমার সংস্কৃতি অনুযায়ী আমার কাছে একে অসম্মান মনে হচ্ছে, তাই আমি এটাকে অসহিষ্ণুতা বলে চালিয়ে দেবো। আসলে সহিষ্ণুতা বলতে ওরা কী বোঝায়?
শিক্ষিকার হাত মেলাতে অস্বীকার করা কেন বেআইনি, তার পক্ষে সেক্যুলারদের পছন্দের আরেকটা যুক্তি আছে—
এর মাধ্যমে জেন্ডার রোল আর জেন্ডার সেগ্রেগেশানের ধারণাগুলো আরও পোক্ত হয়।
হ্যাঁ, তা তো হয়ই। সমাজে নারী-পুরুষের মেলামেশার ব্যাপারে ইসলামী বিধানগুলোর উদ্দেশ্যই হলো নারীপুরুষের মেলামেশা সীমিত করা। তুমি মুসলিম না তাই নারী-পুরুষের মেলামেশা সীমিত করার ব্যাপারটা তোমার কাছে খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আমাকেও কেন সেটা খারাপ বলে মানতে হবে? তুমি অজ্ঞ, তোমার অজ্ঞতাকে আমার কেন মানতে হবে?
হ্যাঁ, তুমি বলতে পারো, এটা তোমাদের দেশ। তাই ইচ্ছেমতো আইন বানানোর অধিকার তোমাদের আছে। তোমাদের দেশে থাকতে হলে তোমাদের মূল্যবোধ আর তোমাদের নৈতিকতা মেনে নিয়েই থাকতে হবে।
ঠিক আছে, মানলাম।
তাহলে সৌদি আরব, ইরান কিংবা অ।ফগ।নিস্ত।ন যখন তাদের দেশে, তাদের পছন্দমতো আইন বানায় তখন কেন তোমাদের এত আপত্তি? তারা যখন তাদের মূল্যবোধ, বিশ্বাস আর নৈতিকতা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ড্রেস কোড কিংবা জেন্ডার সেগ্রেগেশানের নিয়ম করে তখন কেন তোমাদের এত চেঁচামেচি?
এটা কি ভণ্ডামি না? ডাবল স্ট্যান্ডার্ড না?
একই কাজ তোমরা করলে উদারতা-সহিষ্ণুতা আর আমরা করলে সাম্প্রদায়িকতা? তোমরা তোমাদের পশ্চিমা মূল্যবোধ আর সংস্কৃতি অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চাও। মুসলিমরা তাদের ইসলামী মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বাস্তবায়ন করতে চায়। একমাত্র পার্থক্য হলো, মুসলিমরা লুকোচুরি করে না। তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র আর ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই দেয় না। নিজেদের বিশ্বাস আর উদ্দেশ্যের কথা আমরা সোজাসুজি স্বীকার করি।
ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্মীয় স্বাধীনতার বুলি আওড়ালেও পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিমদের ইসলামের বিধান মানতে বাধা দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিধান অমান্য করতে বাধ্য করে। এটাই প্রমাণ করে সেক্যুলারিসমের নিরপেক্ষতা আসলে মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই না।
আসলে নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই। নিরপেক্ষতার নামে পশ্চিমারা তাদের মূল্যবোধ আর সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এ কারণেই ধর্মীয় স্বাধীনতার যুক্তি আওড়ে ইসলামের পক্ষে কথা বলার মানে হয় না।
ধর্মীয় স্বাধীনতার পুরো ধারণাটাই এসেছে একটা নির্দিষ্ট পশ্চিমা প্রেক্ষাপট ও দর্শন থেকে। যেখানে ধর্মের নির্দিষ্ট একটা সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা আছে। আর এই সংজ্ঞার জন্মও নির্দিষ্ট পশ্চিমা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে। ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণার অবধারিত ফলাফল হলো কালচারের পরিবর্তনের সাথে সাথে যেকোনো কিছু ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে চালিয়ে দেয়া।
~ সংশয়বাদী (ড্যানিয়েল হাক্বিকাতযু)