সহজাত বৈশিষ্ট্যের মত আমরা বড়রা স্বভাবজাত কিছু ভুল করে ফেলি। দশ বারো বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানদের কোন কাজেই হাত লাগাতে দিই না এমনকি নিজ হাতে খেতে পর্যন্ত শেখাই না অথচ হঠাত একদিন চেয়ে বসি তারা সবকাজে সব্যসাচী হবে। মা বাবার সাথে বিশেষত মায়ের সাথে এই নিয়ে দ্বন্দ্বটা শুরু হয় সাধারণত সন্তানের টিনএজ বয়সে এসে। অথচ আমরা খেয়াল করলে দেখব সন্তানের বয়স ২ প্লাস হয়ে গেলেই তারা নিজেরা সব কাজ করতে চায়। বাচ্চার লার্নিং এর সাইকোলজিক্যাল ডেভলেপমেন্ট হাতেকলমে মূলত তখন থেকেই শুরু হয়। তারা সিদ্ধান্ত দিতে চায়, নিজের ইচ্ছার শক্তিশালি প্রকাশ দেখা যায়, লার্নিং বাই ডুয়িং এর একটা অদম্য আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যিটা হলো ঐ অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে বদরাগ/জেদ বলে এবং অতটুকু বয়সে অনাহূত ক্ষতির আশঙ্কায় আমরা বাচ্চাদের কোন কাজই করতে দিই না। ভাবছেন "ওমা! ২ বছরের একটা বাচ্চা আবার কি কাজ করবে!"

টিনএজে এসে "কেন কোন কাজ করো না/পারো না তুমি? " বলতে হত না যদি ওর দুই তিন বছর বয়সের কাজ করার ইচ্ছা ও আগ্রহকে আমরা পাত্তা দিয়ে মোটর স্কিলকে দক্ষ হওয়ার সুযোগ দিতাম। পানি খাওয়ার সময় ওর গ্লাসটা ওকেই ধরতে দিন, নিজের জামা নিজেই পরুক না, জামার বোতামগুলোও ওকেই লাগাতে দিন, বাইরে যাবার সময় ওর জুতাটা ওকেই পরতে দিন… এগুলো সময়সাপেক্ষ, কিন্তু ওই সময়টুকু দিলেই দেখবেন কয়েকমাসের মধ্যে সে কাজগুলো কি দক্ষতায় শিখে গেছে এবং বাড়তি পাওনা হল সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে! আমাদের কাজ হলো তার নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করে তাকে কাজ করতে দেয়া।

বাচ্চারা যত বেশি মোটর স্কিলে দক্ষ হয়ে ওঠে তত দ্রুত যেকোন কাজ আয়ত্তে আনতে পারে।


আসুন দেখি বয়স ভিত্তিক কোন কাজগুলোতে তাদের এলাউ করা যেতে পারে:

৪-৫ বছর : বোতলের মুখ লাগানো, পানি ঢেলে খাওয়া, নিজের খাবার নিজে খেয়ে নেয়া, জামা পরা, জিপ/বোতাম লাগানো, খেলনা গুছিয়ে রাখা, জুতার ফিতা বাধা, কাউকে পানি এনে দেয়া ইত্যাদি।

৬ বছর : উপরের কাজগুলি সহ কাপড় গোছানো, বাগানে পানি দেয়া, বই গোছানো, ফার্ণিচার মোছা, নিজে নিজে বাথরুমে যাওয়া ইত্যাদি।

৭-৮ বছর : উপরের কাজগুলি সহ দরকারি জিনিস আগায়ে দেয়া, টেবিলে খাবার নেয়া, নিজের প্লেট ও থালাবাটি ধোয়া, ঘর ঝাড়ু দেয়া, ঘর মোছা, নিজের কাপড় ধোয়া, কাপড় শুকিয়ে আনা ইত্যাদি।

৯-১০ বছর : উপরের কাজগুলি সহ রান্নায় সাহায্য করা, ২-১ টা আইটেম রান্না বা বেকিং শেখা, ঘর গুছিয়ে রাখা, হিসাব রাখতে পারা ইত্যাদি।

আমাদের করণীয় :

- প্রতিটি কাজের জন্য পয়েন্ট সিস্টেম করা যেতে পারে, সপ্তাহ বা মাস শেষে পয়েন্ট হিসেব করে তাদের পছন্দসই উপহারের ব্যবস্থা করা । এতে তারা কাজ করতে আগ্রহী হবে।

- নিজে থেকে কোন কাজ করতে চাইলে এলাউ করা, নিরুতসাহিত না করা।

- প্রশংসা করা। ভুল করলে আমরা বকা দিতে ভুলি না কিন্তু ভাল করলে প্রশংসা করতে চাই না, এটা খুবই নেতিবাচক আচরণ । অথচ প্রশংসা পেলে উতসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

- ভুল করলে খোঁচা না দেয়া বা অপমান না করা। বরং সঠিকটা শিখিয়ে দেয়া।

- নিজে কোন কাজ করার সময় অবশ্যই তাদের সাহায্য নেয়া, অংশগ্রহণমূলক কাজগুলো তারা আরও দ্রুত শিখে নিতে পারে।

- ছেলে এবং মেয়ে উভয় সন্তানকে কাজ করতে উতসাহিত করা।

- শতভাগ পারফেক্ট না চাওয়া। ছোটরা করতে করতেই একদিন পারফেক্ট হবে।

- সবসময় পজিটিভ থাকা, ধৈর্যের সাথে তাদের কাজের সুযোগ দেয়া।