একটি পরিবারে অনেক ধরনের মানুষ থাকে, থাকে অনেক ধরনের সম্পর্ক। মুরুব্বীদের মাঝে আছে দাদা-দাদি, নানা-নানি। বুড়ো হয়নি এমন বয়সের হয়তো চাচা-চাচি, মামা-মামি। অবিবাহিতদের মাঝে থাকতে পারে খালা, মামা, চাচা বা কাজিন। আর শিশুদের মাঝে থাকতে পারে ভাই-বোন কাজিন। তবে আরেকটি শিশুও থাকতে পারে যে পরিবারের কেউ নয় (আমরা অনেকেই তাই মনে করি) কিন্তু সবচাইতে অধিক উচ্চারিত হয় তার নাম। সবার আগে ঘুম থেকে উঠে সেই শিশুটি। সবার শেষে গোসল করে সেই শিশুটি। সবার শেষে খায় সেই শিশুটি। সবার শেষে ঘুমাতেও যায় সেই শিশুটি। তবে সবার চাইতে বেশি খায় সে। মানে পেটেও খায়, পিঠেও খায়। সব মিলিয়ে একটু বেশিই খায়, তাই নয় কি? সবচাইতে শক্ত বিছানায় ঘুমায় সে। সবচাইতে শক্ত রুটিটি খায় সে।
হ্যাঁ, তাকে আমরা ছেড়ি-ছ্যাড়া, পিচ্চি বা কাজের লোক বলে পরিচয় দেই। উপরে যা কিছু বললাম তা করা উচিত কি উচিত নয় তা বলার ইচ্ছা আমার নেই। কি উচিত বা উচিত নয় আশা করি বুঝতে পারছেন। আমি বলবো একটু অন্য বিষয়ে কথা।
আচ্ছা আপনারও কি একটি নিজের শিশু আছে ঘরে? মানে আপনার নিজ সন্তান? যদি থেকে থাকে তবে আমার কিছু বলার আছে। হয়তো অনেকেই ধরে নিয়েছেন আমি বলবো এই কথাগুলি:
আপনার নিজ সন্তানকে যে পোষাক দিয়েছেন বাসার কাজের শিশুটিকেও দিন। যে বিছানায় ঘুমাতে দিয়েছেন নিজ শিশুকে তাকেও দিন। যে খাবার খাওয়াচ্ছেন নিজ শিশুকে, তাকেও দিন… ইত্যাদি। না ভাই আমি এই ধরনের কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করবো না। এগুলি আম জনতার দ্বারা সম্ভবও নয়। তবে তাই বলে যে সাদা মনের মানুষ পৃথিবীতে নাই তা অস্বীকার করছিনা।
আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন আপনার ২-৩ বছরের শিশুটিও বাসার বুয়া, কাজের লোক, ড্রাইভার, দারোয়ানের সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছে? নিশ্চই খেয়াল করেছেন যে বাসার কাজের লোকটিকে সে খামচি দেয়? হয়তো আরো খেয়াল করেছেন যে আপনার শিশু সন্তানটি বুয়াকে লাথি মারে বা থুথু দেয়। হয়তো আরো খেয়াল করেছেন যে আপনার শিশুটি বাসার কাজের শিশুটিকে টিভি দেখতে দেয়না বা খেলনা ছিনিয়ে নেয়। প্রায়ই বলে, “যা এখান থেকে…”। যদি দেখে থাকেন তবে কি অবাক হন নাই!? অবাক হবারইতো কথা! কারন আমরা আমাদের শিশুকে কখনই এইসব শেখাইনা। বরং আমাদের বাচ্চা যেন সবচাইতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য আমরা অনেক টাকা খরচ করি! এই মিডিয়াম সেই মিডিয়াম খুঁজি। দেশ বিদেশ বেড়াতে নিয়ে যাই। উন্নত জায়গাগুলি ভ্রমন করাই। তারপরও আমাদের বাচ্চারা এতো জঘন্য কাজ শিখলো কোথা থেকে, ভেবেই পাইনা, তাই না? দোষ দেই পাশের বস্তিকে; ঐ বস্তি দেখে দেখে শিখেছে। কিংবা মিনা কার্টুন দেখে শিখেছে বলে দাবি করি।
কিন্তু বাস্তব হলো এই যে, আমাদের বাচ্চারা খোদ তার নিজ ঘর থেকেই এই সব জঘন্য আচরণ শেখে। হ্যাঁ, আমাদের কাছে থেকেই শেখে, এই আমাদের কাছে থেকেই শেখে। আমরা খেয়ালই করিনা যে তাদের প্রতি যে আচরণ করছি তা আমার বাচ্চা দেখছে ও শিখছে। আর শিখেছে বলেই আমাদের বাচ্চারাও ওদের সাথে ধমকিয়ে কথা বলে, তুই তামারি করে কথা বলে, লাথি দেয়, মারে। কি করা উচিত বা উচিত নয় আর বললাম না। আপনার নিজ শিশুর শিক্ষার জন্য হলেও বাসার কাজের লোকদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। মনে রাখবেন এই শিশুই কিন্তু বড় হবে। ভুল করে ঐ একই আচরন আপনার আমার সাথেও করে ফেলতে পারে কিন্তু…
(এখানে যা তুলে ধরেছি তা সকল পরিবারে ঘটে তা আমি দাবি করছিনা। তবে অনেক পরিবারে এখনও ঘটে এবং তাদের জন্যই আমার এই লেখা)
নোট: আমার খেয়াল ছিলো না যে, আমার এই লেখাটি সামু থেকে এখানে আনাই হয়নি। আজ ২-নভেম্বর-২০১২ তে এখানে পোস্ট দিলাম। কিন্তু আসলে এটি ২০০৯ এর ২৩ সেপ্টম্বরে পাবলিস করেছিলাম