পূর্বাচল গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। আমেরিকান সিটি হাউজিং প্রকল্প। এক বন্ধু তার জমি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো। উত্তরা থেকে জ্যাম ঠেলে সেখানে পৌঁছতে প্রায় ঘণ্টা খানেক লেগে গেল। আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম, মাগরিবের আযান হতে প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিট বাকি।
দুটি প্লট কিনার জন্য সে কিস্তি দিচ্ছে। একটি প্লট আগামী বছরের শেষে আরেকটি আরও দুই বছর পর হ্যান্ড ওভার করা হবে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটির পর জিজ্ঞেস করলাম, তোমার জমি কোনটা?
সে হেসে উত্তর দেয়, আমার জমিটা ম্যাপে আছে। বাস্তবে এখনও পানির তলায়। ঐ যে দূরে গাছ দেখা যায়, ওটা থেকে একটু সামনেই একটা খালের মত আছে। ওটা পার হয়ে আরও কিছুদূর যেয়ে ডানের রাস্তা দিয়ে প্রথম বামের গলির প্রথম প্লটটা আমার হবে।
অদ্ভুত লাগছিলো। প্লট এখনও চোখে দেখেনি, কিন্তু কিস্তির টাকা প্রায় পুরোটাই দেয়া শেষ। ম্যাপ আর কিছু কাগজপত্র দেখানো হয় আর মুখের এই আশ্বাসবাণী যে অমুক বছরের অমুক মাসে জায়গাটির মালিক আপনি হবেন। প্রতারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকার পরও মানুষ এভাবেই জমি কিনে। এভাবেই চোখ বুঝে কিছু কাগজকে নিজের জমির বিকল্প হিসেবে মেনে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে থাকে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর রাসুল। সাদিকুল আমিন। মিথ্যা বলেন নি যিনি কখনও। যার কথা শুনলে প্রতারিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যার আশ্বাসবাণী, যার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রতিটি বর্ণনা, ঘটবেই ঘটবে।
তিনিও তো আমাদেরকে বলেছেন, নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবে। সবচেয়ে পরে যে জান্নাতে ঢুকবে তাকেও এই পৃথিবীর দশটার সমান জায়গার মালিক বানানো হবে। তাহলে সেই জায়গার মালিক হওয়ার জন্য সেখানকার কারেন্সি (নেক আমল) কি পরিমান আমরা এডভান্স করেছি?
পৃথিবীর ছোট্ট একটি দেশের ছোট্ট একটি শহরের এক খণ্ড জমির মালিকানা হাসিলের জন্য যতটুকু বিশ্বাস ও পরিশ্রম আমরা দেই, তার শত ভাগের এক ভাগ ও কি শতগুন উত্তম জমির জন্য দেই?
প্রতারিত তো বোকারাই হয়। আমরা কি তাহলে বোকা নই?