“YOU PEOPLE ARE SO MUCH BLESSED THAT YOUR PARENTS ARE MUSLIMS. YOU CAN PRAY FOR THEM. YOU CAN DO HAJJ FOR THEM IF THEY DIDN’T DO THAT. YOU CAN PAY SADAKA ON BEHALF OF THEM. BUT ME? I CAN NOT EVEN MAKE DU’A FOR MY MOTHER.”
শেখ আবু তাওবার একটা লেকচার দেখেছিলাম। তিনি একজন REVERTED মুসলিম। মুসলিম হতে পারা কতটা রহমত আর বরকতের ব্যাপার সে বিষয়ে বলছিলেন তিনি। যখন তিনি তার মায়ের কথা বলা শুরু করলেন, তার গলা ধরে এসেছিল, অঝর নয়নে কাঁদছিলেন কারণ তার মা একজন কাফির হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। উপরের কথাটি তিনি বার বার বলছিলেন আর ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন। সে লেকচারে তিনি অনবরত কেঁদেছিলেন শুধু একটা কথা বলে,
“I AM HAPPY TO BE A MUSLIM.” “I AM HAPPY TO BE A MUSLIM.” “I AM HAPPY TO BE A MUSLIM.”
[০১]
আজকের মুসলিমরা হল এমন এক অভাগার দল, যারা নিজেরা উপলব্ধিই করতে পারেনা কতটা বরকত, কতটা রহমত, কতটা Blessing এর তারা অধিকারী। একজন কাফির যেমন অনুভব করতে পারেনা সে কতটা দুর্ভাগা আর ধ্বংসপ্রাপ্ত, তেমনি আজকের মুসলিমরাও বুঝতে পারছেন না কি নেয়ামত তারা লাভ করেছেন আর তার ব্যবহারটা তারা কি করছেন।
শেখ আবু তাওবা বারবার দর্শকদের একটিই প্রশ্ন করছিলেন,
“ARE YOU NOT HAPPY AND BLESSED TO BE A MUSLIM???”
একজন মুসলিম হিসেবে বেড়ে উঠতে পারা কতটা রহমতের, তা অনুধাবন করার শক্তির বড় অভাব আজকের মুসলিমদের। মুসলিম হওয়াটাকে শুধুমাত্র একটা ধর্মগত পরিচয়েই সীমাবদ্ধ করে ফেলছেন তারা। অথচ আলাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগের পরের গুনাহ মাফ হওয়া সত্ত্বেও তিনি নামাযের পর নামায পড়ে পা ফুলিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন আল্লাহ্র ইবাদতের, আল্লাহ্র দাসত্বের, আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণের। আজকের মুসলিমরা কি এরপরেও বোঝেনা কতটা BLESSED তারা?
মুসলিমদের এই বোধশক্তির অভাব এর কারণ শুধুমাত্র একটিই।
“দুনিয়া”
[০২]
আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
"তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।" [৫৭-২০]
"এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।" [২৯:৬৪]
"…. পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ।" [৪০:৩৯]
"পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বুঝ না?" [৬:৩২]
"তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা বৈ নয়। আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বোঝ না?" [২৮:৬০]
"হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারণা না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।" [৩৫:৫]
"অতএব, তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে।" [৪২:৩৬]
আজ এই দুনিয়াই মুসলিমদের শিখিয়ে দিচ্ছে—এই তো মজার জায়গা। এইতো স্বপ্নপুরী। খাও, দাও আনন্দ কর! বাঁচবে কয়দিন? ITS YOUR LIFE, COLOR IT!! কি ভয়ানক প্রতারণা!!
[০৩]
সব মুসলিমই ঈমানদার। আছে আল্লাহ্র উপর প্রগাঢ় বিশ্বাস। তেমনি আছে বিচার দিবসেরও বিশ্বাস। তবে কিসে সেই বিচার দিবসের বিচারের ভয় থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখছে?
"দুনিয়া"
আল্লাহ্ বলেন,
"হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? …." [৯:৩৮]
এটাই হল বাস্তবতা। দুনিয়ার রঙ, ঢং, চাকচিক্য আজ মুসলিমদের ভুলিয়ে রেখেছে কিছু মহা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে—তাদের আল্টিমেট গোল কি? কি জন্যে এই পৃথিবীতে আগমন? কোথায় যাব এর পর?
বস্তুত নাস্তিকদের সাথে তাদের শুধুমাত্র অভিধানগত পার্থক্য ছাড়া আর কোন বড় ধরনের Practical পার্থক্য তারা আর রাখছেন না। একজন মুসলিমকে বুঝতে হবে এই দুনিয়া অতি অল্প সময়ের একটা মায়াজাল। দুনিয়া যদি এক চুমুক পানি হয়, আখিরাত হল মহাসাগর।
আল্লাহ্ বলেন,
"….অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প" [৯:৩৮]
"নিশ্চয় এরা পার্থিব জীবনকে ভালবাসে এবং এক কঠিন দিবসকে পশ্চাতে ফেলে রাখে" [৭৬:২৭]
[০৪]
একজন মুসলিমকে যখন জিজ্ঞাসা করবেন, আপনার ধর্ম কি? তখন তিনি উত্তর দেবেন তিনি মুসলিম। কিন্তু মুসলিম হতে হলে যে গুণসমূহ দরকার তা যদি তার ভেতর না থাকে তবে তিনি কোন অবস্থাতেই পূর্ণাঙ্গ মুসলিম নন। একজন বেনামাজী মুসলিমকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি নামায কেন পড়েন না। তিনি একগাদা EXCUSE এনে জমা করে ফেলবেন। এবং সব EXCUSE ই দুনিয়া কেন্দ্রিক। কখনো শুনবেন না, যে ব্যাপক আধ্যাত্মিকতার কারণে আমি নামায পড়তে পারছিনা বা আখিরাতের টেনশনে নামায মিস হয় আমার।
এখানেও দুনিয়া। এই দুনিয়ার মোহ, দুনিয়ার EXCUSE সবই আমাদের ভুলিয়ে রাখছে আমাদের দায়িত্ব থেকে। ভুলিয়ে রাখছে যে আমাদের একমাত্র দায়িত্ব হল আল্লাহ্র ইবাদাত।
আল্লাহ্ বলেন,
"আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।" [৫১:৫৬]
অথচ আমাদের কাজকর্ম দেখলে মনে হয় পেটপুজো আর প্রবৃত্তি পুজোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। টাইম থাকলে মাঝে মাঝে ইবাদাত করলাম।
এই দুনিয়াই কিন্তু আমাদের সর্বাবস্থায় ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার প্রয়াসে লিপ্ত। ইসলাম যে একটা Standard of Life prescribed by ALLAH Himself, এটা থেকে ভুলিয়ে রাখতেও দুনিয়ার জুড়ি নেই। আমরা এখন লাইফ স্ট্যান্ডার্ড ফলো করি যেটা আমাদের দুনিয়া শেখাচ্ছে। মুভিস্টার, স্পোর্টস্টার, সিঙ্গার, সেলিব্রিটি, মাল্টিবিলিওনার, আধুনিক বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি নানা ধরনের IDOL আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করছে এই দুনিয়া। যাদের ফলো না করলে আমাদের আজ আর জাতে উঠা হচ্ছে না।
মুসলিমরা এখন জীবনটা একটা সাইকেলে আবদ্ধ করে ফেলেছে।
পাস করতে হবে → চাকরি পেতে হবে → মোটা বেতন পেতে হবে → বিয়ে করতে হবে → সংসার চালাতে হবে → মরে যেতে হবে
[০৫]
একথা আসলেই সত্যি যে এই দুনিয়া হল সবচেয়ে বড় রহস্যময় স্থান। এই দুনিয়াকে যে যেইভাবে ব্যবহার করবে, সেভাবেই তা আখিরাতে সঙ্গ দেবে। যদি এর প্রতারক চেহারাটা ধরতে না পেরে এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যান, তবে ধ্বংস অনিবার্য। যদি যতদিন বেঁচে আছেন, ততটা দিন এই দুনিয়াতে আল্লাহ্র ইবাদাতে কাটাতে পারেন, তবে মিলবে চূড়ান্ত সফলতা।
যদি আপনি এই দুনিয়ার প্রতারক দিকটা বিশ্লেষণ করেন, তবে দেখা যাবে এর চেয়ে বড় প্রতারক আর কিছুই হয়না। এর সামান্য রঙ আপনার গায়ে লাগলেই আপনি আখিরাত ভুলতে বাধ্য। বড় আফসোসের কথা আজ ঠিক এই কাজটাই হচ্ছে মুসলিমদের সাথে। কারণ একজন মুসলিম নামাযের ব্যাপারে উদাসীন থাকবে এই কথাটা ভাবতেই যেখানে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে, সেখানে বছরের পর বছর নামায না পড়েও অনেক মুসলিম ভাই-বোন দুনিয়ার চাহিদা পূরণে লিপ্ত। কি করে সম্ভব হল এই অসম্ভব ব্যাপারটি?
“দুনিয়া”
[০৬]
ইমাম গাজ্জালী একবার একটা গল্প বলেছিলেন। এক ব্যক্তি জঙ্গলে হাটছিলেন। হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু নিয়েছে। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়ে একটি পানিহীন কুয়া দেখতে পেলেন। তিনি চোখ বন্ধ করে দিলেন ঝাঁপ। পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি দেখে তা খপ করে ধরে ফেললেন। এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন। উপরে চেয়ে দেখলেন কুয়ার মুখে সিংহটি তাকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল এক সাপ তার নিচে নামার অপেক্ষায় চেয়ে আছে। বিপদের উপর আরো বিপদ হিসেবে দেখতে পেলেন একটি সাদা আর একটি কালো ইঁদুর তার দড়িটি কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে। এমন হিমশিম অবস্থায় কি করবেন যখন তিনি বুঝতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ তার সামনে কুয়ার সাথে লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেলেন। তিনি কি মনে করে সেই মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন। সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের গর্জনরত সিংহ, নিচের হাঁ করে থাকা সাপ, আর দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের কথা ভুলে গেলেন। ফলে তার বিপদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ালো।
ইমাম গাজ্জালী এই গল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু, যে সর্বক্ষণ আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাপটি হচ্ছে কবর। যা আমাদের অপেক্ষায় আছে। দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন, যাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকা। সাদা ইঁদুর হল দিন, আর কালো ইঁদুর হল রাত, যারা প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের আয়ু কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া। যার সামান্য মিষ্টতা পরখ করে দেখতে গেলেও আমাদের এই চতুর্মুখি ভয়ানক বিপদের কথা ভুলে যাওয়াটা বাধ্য।
মুসলিমদের বুঝা উচিৎ কেন এই দুনিয়ায় আগমন, কেন এখানে বেঁচে থাকা আর কেনই বা মরতে হবে?
দুনিয়া হল একটা টেস্ট। Whether you get deceived by it or not.
আল্লাহ্ আমাদের দুনিয়ার প্রতারণা থেকে রক্ষা করুন।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী