প্রথম অংশ—Click here.
[৬]
ক. প্রথম কথাটি আমাদের ভাইদের তথা স্বামীদের উদ্দেশ্যে। ছেলেরা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কম আবেগী এবং অধিক যুক্তিবাদী বলেই হয়ত স্ত্রীদের অনেক আহ্লাদ-আবদারকে যুক্তির ছাঁচে ফেলে বাতিল করে দেয়। স্ত্রীদের সকল আবেগ-আহ্লাদ-অভিযোগকে যুক্তি দিয়ে প্রত্যাখান করা এমনকি বিচার করতে যাওয়াও বোকামি। এতে সমাধানতো হয়ই না বরং আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভাইয়েরা এখন থেকে একটা কথা মাথায় সেটআপ দিয়ে নিন—“স্ত্রীগণ তাদের সকল অভিযোগ-আবদার শুধু পূরণ করার জন্যই স্বামীর কানে দেয় তা না বরং অনেক সময় তারা শুধু এতটুকুই চায় যে কেউ তার অভিযোগ-আবদারগুলো অন্তত মন দিয়ে শুনুক।” সুতরাং এসব ক্ষেত্রে আপনি সাময়িকভাবে যুক্তিকে একপাশে সরিয়ে রেখে শুধু মন দিয়ে (দিতে না পারলেও অন্তত দেওয়ার ভান করে) তার কথাগুলো শুনুন এবং তাকে সান্ত্বনা দিন, কিছু ভালোবাসার কথা বলুন। বোঝাতে চেষ্টা করুন যে, আপনি তার সকল আবদার মেটাতে যদি নাও পারেন অন্তত তার পাশে আছেন। সেই সাথে কথা এবং তর্কে ভুলেও কখনও স্ত্রীর সাথে প্রতিযোগীতা করবেন না। একজন শায়খ বলেছিলেন—“স্ত্রীকে জয় করার দুটি হাতিয়ার হল—দয়া এবং নীরবতা।” সুবহান আল্লাহ! এই গুণ দুটি যে কত পাহাড়সম দাম্পত্য সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে ভাবাও যায় না।
খ. আমাদের সমাজে অহরহ যে দাম্পত্য সমস্যাগুলো ঘটে সেগুলো একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অধিকাংশ সমস্যার মূল সূত্রপাত হয় জিহ্বার অসংযত ব্যবহার থেকে। আমরা স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেই যদি আমাদের জিহ্বাকে আরেকটু সংযত করতাম তবে আমরা যেমন অনেক দাম্পত্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতাম তেমনি বিচ্ছেদের ছোবল থেকে বেঁচে যেত আমাদের সমাজের হাজারো সংসার। এই জিহ্বার অসংযত ব্যবহার হতে পারে অনেক উপায়ে, তন্মধ্যে কিছু আছে যেগুলো আমাদের স্বামী-স্ত্রীরা বেশি করে থাকে অথচ এগুলো একেবারে Nonsensical আচরণ। আমার কথাটা একটু বেশি রূঢ লাগতে পারে, দুঃখিত। কিন্তু আমি এটাই মনে করি। অনেক স্বামীর কথা শুনেছি, কথায় কথায় স্ত্রীকে বলে—“চলে যাও তোমার বাপের বাড়ি।” এই কথা শুরুতে অনেক স্ত্রীই এড়িয়ে গেলেও একসময় দেখা যায় ঠিকই ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর স্বামী বেচারার মাথা ঠাণ্ডা হয়ে আসলে তখন লজ্জার মাথা খেয়ে বউ এর রাগ ভাঙ্গাতে যায়। আর ততক্ষণে স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গেলেতো শ্বশুরবাড়ির সামনে নিজের মান সম্মানের বারোটা বাজে। খুব দুঃখ লাগে যখন দেখি, এতটুকু আত্মসম্মানবোধও অনেক স্বামীরই নাই। এরা ঝগড়া করে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারাটা নিজের ক্রেডিট মনে করে। অনেক স্বামী-স্ত্রী আছে যারা কথায় কথায় একজন আরেকজনকে বলে—“তোমার ভাত মুখে তুলব না”, স্ত্রীদের একটা কমন ডায়ালগ হল—“তোর বাপ আমাকে জীবনে অমুক জিনিসটা দিল না”, “তোর বাপের সংসারে জীবনে শান্তি কী জিনিস বুঝলাম না”, “তুমি আমারে কী দিসো এই জীবনে?” ইত্যাদি। এসব কথাই হল স্বামীর প্রতি স্ত্রীদের অকৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, আর কথাগুলো যদি মন থেকে না হয়ে নিছক রাগের মাথায় হয় তাহলে তা নির্বুদ্ধিতার বহিঃপ্রকাশ। একই কথা স্বামীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকের জন্য বলি, রাগ করে তিনটি জিনিস কখনও বন্ধ করবেন না—খাওয়া, কথা এবং বাড়িতে থাকা। দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে মিটমাটের দুয়ার ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসা। সুতরাং মূলনীতি হল—“কঠোরভাবে করুন জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ, লুফে নিন সুস্থ দাম্পত্য জীবন।” 😉
গ. আমার পরিচিত এক দম্পতি। মাঝেমাঝেই নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি করেন। তাদের খুব কমন একটা চেঁচামেচির ট্রেণ্ড এরকম—
স্বামীঃ অমুকের বউকে দেখো, মাস শেষে তমুক পরিমাণ টাকা নিয়ে আসে। সংসারে দেয়। কত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। আসলে চাকরি না করলে জীবনের স্ট্রাগল বোঝা যায় না। সারাজীবনতো আমার উপরে খাইলা, আমার কষ্ট আর কী বুঝবা!
স্ত্রীঃ তেনার স্বামীতো প্রায়ই নিজ হাতে রান্না করে। তুমি কতদিন আমাকে রান্না করে খাওয়াইসো? সারাজীবনতো আমার উপর দিয়েই গেলা, আমার কষ্ট আর কী বুঝবা!
এই কথাগুলো আমার নিজের কানে শোনা। আহা! অন্যের সংসারের সাথে নিজের সংসারের তুলনা দিয়ে নিজ হাতে নিজ পায়ে কুড়াল মারার মত নির্বুদ্ধিতা আর কী হতে পারে? আরে আল্লাহর বান্দা! মানুষের সংসারে কে কী করছে সেগুলো নিয়ে পিএইচডি করা বাদ দিয়ে নিজের ঘরের আগুনের সূত্র বের করে তা দ্রুত নেভানোর চেষ্টা করুন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে অন্য দম্পতিদের সাথে তুলনা দিবেন না প্লীজ! প্লীজ! প্লীজ! আর নিজেদের দাম্পত্য সমস্যার কথা ঘুণাক্ষরেও জনে জনে বলে বেড়াবেন না। তৃতীয় কারও সামনে প্রিয় মানুষটার গীবত গাইতে পারলে অন্তরের জ্বালাটা সাময়িক কমতে পারে তবে একসময় তা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে সময় নিবে না। এই বিষয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সতর্ক সচেতনতা জরুরী, বিশেষত স্ত্রীদের।
যেকোন দাম্পত্য সমস্যা প্রথমে একান্তে নিজেরা বসে সমাধান করার চেষ্টা করুন। এক বৈঠকে না হোক, দুই-তিন-চার-পাঁচ যতবার লাগে বসুন, দুজন তাহাজ্জুদ পড়ে (তাহাজ্জুদ না পারলে দিনে নফল সালাত পড়ে) আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ভিক্ষা চান আল্লাহ যেন আপনাদের অন্তর দুটিকে আবার জোড়া লাগিয়ে দেয়। এরপরও কাজ না হলে উভয়ে নিজ পরিবারের কোন অভিজ্ঞ-বিজ্ঞ-অভিভাবকসুলভ-দায়িত্বশীল সদস্যকে বিষয়টা বলুন। তাদের পরামর্শ মোতাবেক নিজেদের মধ্যে মিটমাটের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আসলে মুরুব্বিদের চেয়েও বড় ভূমিকা এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই রাখতে পারে—আন্তরিকভাবে পরস্পর মিলেমিশে থাকতে চাওয়ার মাধ্যমে।
ঘ. এবার ভাইদের খুব স্পর্শকাতর দুটো নসীহা দিয়ে বিদায় নিই—
• আপনার স্ত্রী যখন আপনার জন্য সাজুগুজু করবে, তা যত সামান্যই হোক না কেন কিংবা তাকে যেমনই লাগুক না কেন, অবশ্যই অবশ্যই তার প্রশংসা করবেন। আপনার স্ত্রী আপনার জন্য নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে অথচ আপনি তা খেয়ালই করলেন না, প্রশংসাতো দূরের কথা—এটা একটা বড়সড় অপরাধ। তবে এরচেয়েও বড় অপরাধ হল স্ত্রীর সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেও তাকে খোঁটা দিয়ে বা ছোট করে কিছু বলা কিংবা অন্যের স্ত্রীর সাথে তার তুলনা দেওয়া।
• যেকোন সময়ই গায়রে মাহরাম কোন মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকা নিষিদ্ধ, এর অসংখ্য রুহানী ক্ষতি রয়েছে। তবে স্ত্রীর সামনে কোন গায়রে মাহরামের দিকে তাকিয়ে থাকার ক্ষতি আরও বেশি। এতে স্ত্রী যেমন ভয়াবহ মানসিক আঘাত পায় তেমনি তার আত্মবিশ্বাসও ভেঙ্গে পড়তে পারে। সে ভাবতে পারে, ঐ মহিলার মাঝে এমন কিছু আছে যা তার স্বামীকে মুগ্ধ করছে অথচ তা তার মধ্যে নেই। কিন্তু এটা নিছক শয়তানের ধোঁকা। তাই স্ত্রীর সামনে গায়রে মাহরাম মহিলার দিকে না তাকানোর ব্যাপারে আরও অধিক কঠোরতা অবলম্বন করুন ভাইয়েরা। অনেক দ্বীনি ভাই-বোনেরাও এক্ষেত্রে একটা ভুল করে থাকেন আর তা হল ভাইয়েরা স্ত্রীদের সামনে তাদের (ভাইদের) ভাবীর অত্যন্ত প্রশংসা করে থাকেন কিংবা অন্যান্য গায়রে মাহরামের তুলনায় ভাবীর সাথে পর্দার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখান। এই বিষয়টা কিন্তু দ্বীনদার স্ত্রীদের দারুণ অপছন্দের একটা বিষয়। এমনিতেও হাদীসে দেবর-ভাবীর সম্পর্ককে মৃত্যু-তুল্য বলা হয়েছে। তাই বিয়ের পর আপন ভাবীদের সাথে পর্দার ক্ষেত্রে কোন শিথিলতা দেখালে চলবে না। বোনদের জন্য এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে ভাসুরের সাথে পর্দার কঠোরতা। ভাসুরের সাথে পর্দার শিথিলতাও দ্বীনি ভাইদেরকে দারুণভাবে কষ্ট দেয়। আর ভাসুরতো অন্যান্য গায়রে মাহরামের মতই একজন গায়রে মাহরাম, তার আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই।
[৭]
আজ লিখার আগে ভাবছিলাম কী দিয়ে শুরু করব! ভাবছিলাম আর ডায়েরির পাতা উলটাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা লিখায় চোখ পড়ল—
ওর সাথে বাইরে ঘুরতে গেলে সর্বদা হাসিমুখে থাকতে হবে। কিছুতেই বিরক্ত হওয়া যাবে না। বিরক্তি দূর করতে না পারলে যাওয়ার চেয়ে না যাওয়াই ভাল।
লিখাটি পড়ার সময় ঘটনার শানে নুযুল মনে পড়ল। বিয়ের পরপর প্রথমদিকে এই বদভ্যাসটা আমার ছিল। আহলিয়ার সাথে বেড়াতে গিয়ে সামান্য কারণে বিরক্ত হয়ে যেতাম। হয়ত বৃষ্টির দিনে পাশ দিয়ে কোন গাড়ি শাঁ শাঁ করে আমাকে কাদাপানিতে ভিজিয়ে চলে গেল, ব্যস! হয়ে গেলাম চরম বিরক্ত। ঘুরার মুডটাও নষ্ট, সাথে আহলিয়ার কষ্ট! আলহামদুলিল্লাহ, এই বদভ্যাস এখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
বিষয়টা শুনতে হালকা লাগলেও আসলে কিন্তু স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই খুব ক্রিটিকাল। অনেক সময় এমন হয় যে, স্বামী-স্ত্রী সপ্তাহান্তে অনেক প্ল্যান করে কোথাও ঘুরতে গেছেন কিন্তু মাঝপথে কোন এক কারণে একজন বিগড়ে গেল। ব্যস! দুজনেরই ঘোরার বারোটা বাজল। হয়ত একসাথে কোথাও খেতে যাওয়া হল কিন্তু খাবার অর্ডার করার পরই তুচ্ছ কোন কারণে বাধল ঝগড়া। এরপর দুজন চুপচাপ খেয়ে ঘরে প্রত্যাবর্তন। বিষয়টা কিন্তু আসলেই খুব পীড়াদায়ক। আমাদের এই কর্মব্যস্ত চাকুরি/ব্যবসায়ী জীবনে জীবনসঙ্গিনীর সাথে ঘোরাঘুরির সময় কতটুকুই বা পাই? এই যৎসামান্য সময়টুকুও যদি আমরা মনোমালিন্যে অপচয় করি তবে আর থাকে কী? যাদের অল্পতেই বিরক্ত হওয়ার/রেগে যাওয়ার অভ্যাস আছে তারা কিন্তু এই বিষয়টা কিছুতেই হাল্কা ভাবে নিবেন না। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কে মারাত্মকভাবে আঘাত হানতে পারে এই সমস্যাটি। বেটার হাফকে নিয়ে বের হওয়ার আগে তাই সচেতনভাবে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। তাই আসুন আজ থেকে মনস্থির করি—স্বামী/স্ত্রীর সাথে বাইরে ঘুরতে গেলে সর্বদা হাসিমুখে থাকব, কিছুতেই বিরক্ত হব না। বিরক্তি দূর করতে না পারলে বাইরে গিয়ে ঝগড়া না করে ঘরে থেকেই গল্প করব তবুও অবসরটুকু ঝগড়া করব না।
সাংসারিক জীবনে যখন একঘেয়েমি ভর করে তখন স্বামী-স্ত্রীর মাঝের স্বাভাবিক আহ্লাদ-ভালবাসায় ঘাটতি আসাটা স্বাভাবিক। এমনকি তা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীলতা ও দয়া-মায়ার ঘাটতি পর্যন্তও গড়াতে পারে। এর কিছু লক্ষণ এমন—
- অফিস থেকে কাজের ফাঁকে স্ত্রীকে ফোন দিলেন কিন্তু স্ত্রী সংসারের/পেশাগত কাজের ব্যস্ততায় আপনার ফোন দেখে খুশি হওয়ার পরিবর্তে বিরক্ত হল।
- স্ত্রী বাসা/অফিস থেকে কাজের ফাঁকে আপনাকে ফোন দিল আর অফিসের কাজের ব্যস্ততায় আপনি ফোন দেখে বিরক্ত হলেন।
- আপনি অফিস থেকে এসে স্ত্রীকে পরিপাটি দেখতে চান অথচ সংসারের এত এত কাজ সামলে আপনার জন্য কিছুটা পরিপাটি হতে তার বিরক্ত লাগে।
- আপনি এত এত বাজার-কেনাকাটা করেন কিন্তু কখনও স্ত্রীর জন্য সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসার কথা ভাবলেও বিরক্তি লাগে।
- স্বামী/স্ত্রীর একজন আরেকজনের সাথে কিছুক্ষণ একসাথে বসে গল্প করতে চাইলে কোন একপক্ষের মনে হওয়া—‘এই বয়সে এত ন্যাকামি আসে কইত্তে?’
এই ধরনের সমস্যার একটা খুব সহজ সমাধান ইসলাম আমাদেরকে বাতলে দিয়েছে। আর তা হল— বেশি বেশি সালামের চর্চা করা। অধিক পরিমাণ সালাম বিনিময় শুধু যে ঘরের বাইরের মানুষদের সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলে তা না বরং স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও পারস্পরিক মমতা-ভালবাসা বাড়িয়ে দেয়। বাসায় ঢুকেই একে অপরকে সালাম দেওয়া, ফোন রিসিভ করে প্রথমেই সালাম দেওয়া, এমনকি এক ঘর থেকে আরেক ঘরে গেলেও সালামের অভ্যাস করা একটি সংসারে মমতাময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এই সালাম বিনিময়ের অভ্যাস শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের উচিৎ সন্তানদেরকেও এই শিক্ষা দেওয়া এবং বাসায় বাবা-মা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছোট-বড় সকলের মাঝে বেশি বেশি সালামের চর্চা জারি রাখা।
এবার আমার এমনই একটি উপলব্ধির কথা শেয়ার করতে চাই যা আমি ব্যক্তিগত সার্কেলে সবাইকেই বলে থাকি। আর সেটা হল- বাবা-মায়েদের নামে সাদাকাহ করা ও নিয়মিত দুয়া করা। এর আগে কোন এক পর্বে বলেছিলাম স্বামী-স্ত্রী একসাথে নিয়মিত ভিত্তিতে সাদাক্বাহ করলে পরিবারে অপরিসীম বরকত ও আল্লাহর রহমত নেমে আসে। আরেকটু আগ বাড়িয়ে আমরা যদি আমাদের বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ির পক্ষ থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে সাদাক্বাহ করি (বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ যদি তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে থাকেন) তবে তা যেমন তাদের সাওয়াবের খাতায় যুক্ত হবে তেমনি এই কাজের উসীলায় আল্লাহ আমাদেরও সাংসারিক জীবনে বরকত দিবেন। আচ্ছা, কোন স্ত্রী যদি দেখে তার স্বামী তার (স্ত্রীর) বাবা-মায়ের নামে দুয়া-সাদাক্বাহ করছে কিংবা কোন স্বামী যদি দেখে তার স্ত্রী তার (স্বামীর) বাবা-মায়ের নামে দুয়া-সাদাক্বাহ করছে তাহলে কি একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা জাগবে না? আর এতে আমরাও সাওয়াবের ভাগীদার হব ইনশা আল্লাহ।
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিৎ একে অপরের প্রতি নিজের ভালোলাগার, পছন্দের বিষয় ও বস্তু শেয়ার করা। যেমন—আমরা ছেলেরা প্রায়শই বাইরে এটা-ওটা খেয়ে থাকি (পেশাগত কারণেও আমাদেরকে বেশিরভাগ বাইরে যাওয়া-আসা করতে হয়)। কখনও এমন কিছু খেতে গিয়ে যদি আমাদের ভাল লেগে যায় তবে আমরা বাসায় নিয়ে আসতে পারি। স্ত্রী যদি দেখে তার স্বামী Randomly কিছু পছন্দ করে স্ত্রীর জন্য নিয়ে এসেছে তবে বিষয়টা কাকে না আনন্দ দিবে? এখানে খাদ্য কিংবা খাওয়াটা মুখ্য না, স্বামী যে স্ত্রীর কথা স্মরণ করে তা নিয়ে এসেছে এই ‘স্মরণ করা’টাই মুখ্য। এই কাজ স্ত্রীরাও বাইরে গেলে স্বামীর জন্য করতে পারেন।
এবার বোনদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলে আজকের মত শেষ করি। বোনদের ব্যাপারে একটি কথা শোনা যায়—স্ত্রীরা কোন Past Issue সহজে ভোলে না। কথাটি কিছুটা হলেও সত্য বটে। হয়ত আজ মুখ ফস্কে কিছু একটা বলে ফেলবেন এবং ২/১ দিন যেতে না যেতেই আপনি তা ভুলে যাবেন (পুরুষরা বৈশিষ্ট্যগতভাবেই এমন—কোন কিছু বেশিদিন মাথায় রাখে না) কিন্তু দেখবেন যে, আপনার স্ত্রী কয়েক বছর পরেও একেবারে সময় ও সুযোগ মত আপনাকেই আপনার কথা ফিরিয়ে দিবে। হয়ত অনেকেই বলবেন যে—সবাইতো এমন না। জ্বী বোন, আসলেই সবাই এমন না। কিন্তু সত্য কথা হল নারীদের অধিকাংশেরই একটা প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য এটা। তাহলে এখান থেকে কী শিক্ষা? স্বামীদের জন্য শিক্ষা হল—এমন কিছু স্ত্রীকে বলবেন না যা ভবিষ্যতে আপনার বিরুদ্ধেই দলীল হয়ে যায়। আর স্ত্রীদের জন্য শিক্ষা হল—Never ever drag any past issue for lifetime.
[৮]
দ্বীনের বুঝ আসার পর অধিকাংশ জেনারেল পড়ুয়া ভাইদের বিয়ের সময় একটা সাধারণ চাহিদা থাকে—স্ত্রীকে বাইরে জব করতে দিবেন না। হ্যাঁ, তাদের এই চাহিদার প্রতি পূর্ণ সম্মান রাখতেই হবে কারণ, বর্তমানে সেক্যুলার সোসাইটিতে একটি মেয়ের, যদিও সে দ্বীনদার না হয়, নিরাপত্তার যে কতটা ঘাটতি রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। সেখানে পরিপূর্ণভাবে পর্দা রক্ষা করে কাজ করা দ্বীনদার মেয়েদের জন্য একরকম অসম্ভবই বটে। তাই ভাইদের এই চাহিদার প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে। কিন্তু ঘরে থেকেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যথোপযুক্ত তারবিয়্যাহ এবং তাযকিয়্যাহর জন্য আমাদের স্ত্রীদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় ও তরবিয়তে বলীয়ান করে তোলার যে গুরুদায়িত্ব আমাদের স্বামীদের উপর আছে তা যেন অনেকটা আলোচনার আড়ালেই থেকে যায়। অথচ অনেক স্ত্রীদেরই পূর্ণ যোগ্যতা আছে ঘরের সমস্ত গুরুদায়িত্ব পালন করেও দ্বীনি শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার। আর কেনই বা থাকবে না বলুন? যেখানে একটি মেয়ে মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তদপেক্ষা কষ্টকর চাকরিতে জয়েন করে ‘shine’ করতে পারে তারা উপযুক্ত গাইডলাইন ও সুযোগ পেলে ঘরে থেকেই আলেমা পর্যন্ত হতে পারেন তা একরকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এজন্য দরকার স্বামীদের পক্ষ থেকে সামান্য স্যাক্রিফাইস ও সাপোর্ট।
দেখুন, আমাদের স্ত্রীরা দিনের সিংহভাগ সময় বাচ্চা-সংসার সামলে রাখে বলেই আমরা এত নিশ্চিন্তে রিযিক অন্বেষণ করতে পারি, তাহলে আমাদের কি উচিত নয় বাসায় ফিরে আমাদের স্ত্রীদের জন্য কিছুটা অবসরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেন তারা দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের ও সন্তানদের তারবিয়্যাহ ও তাযকিয়্যাহর একটা রোডম্যাপ তারা পেয়ে যায়? আমাদের স্ত্রীগণ দ্বীনের ‘ইলমি ও আমলী মেহনতে যত এগিয়ে যাবে আমাদের সন্তান-সন্ততিরাও দ্বীনের পথে ততই ‘ইস্তিকামাত’ থাকতে পারবে—এতে নিশ্চয়ই কারও সন্দেহ নেই।
অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা কাজ করে যে, মেয়েদের দায়িত্ব শুধুই বাচ্চা সামলানো। আমি এর সাথে প্রচণ্ডভাবে দ্বিমত পোষণ করি। আমি মনে করি, মেয়েদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ‘বাচ্চা সামলানো’ নয় বরং ‘বাচ্চাকে গড়ে তোলা।’ একেবারে শিশুকাল থেকেই একটা বাচ্চাকে দ্বীনের উপর ‘গড়ে তুলতে’ হলে তার মায়ের কতটুকু প্রস্তুতি দরকার সেই খেয়াল কি আমরা বাবারা করি? আর যদি করে থাকি তবে সেই প্রস্তুতির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি? এজন্য তাদের যে অবসরটুকু করে দেওয়ার দরকার ছিল তা কি আমরা করেছি?
তাদের দ্বীন শিক্ষার কোনো মাধ্যমের সাথে জুড়ে দেওয়ার জন্য যে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা আমাদের জন্য জরুরি ছিল তার কতটুকু আমরা করেছি? সর্বোপরি, আমরা কি আমাদের জীবনসঙ্গিনীকে উৎসাহিত করেছি দ্বীনের জ্ঞানে বলীয়ান হয়ে আমাদের ঘরগুলিকে একেকটা দ্বীনের দূর্গে পরিণত করার জন্য?
আজকাল দ্বীনি কমিউনিটিতে একটা কথা খুব শোনা যায়—আমাদের সমাজে অনেক নারী ডাক্তার প্রয়োজন, তাছাড়া আমাদের নারীরা কোথায় যাবে চিকিৎসার জন্য? অবশ্যই আমাদের অনেক নারী ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু আমাদের সমাজে কি ‘আলিমার প্রয়োজন নেই? নারীদের অনেক রোগব্যাধি যেমন পুরুষ ডাক্তারের কাছে প্রকাশ করা ও চিকিৎসা নেওয়া বিব্রতকর তেমনি নারীদের অনেক মাস’আলাও আছে যা ইমাম/আলিমদের কাছে জিজ্ঞেস করা বিব্রতকর। আর তাছাড়া শুধু মাস’আলার বাইরেও একজন ‘আলিমা যেভাবে তার সার্কেলের মহিলাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে পারে ও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারে সেভাবে একজন ‘আলিমের পক্ষে সম্ভব নয় সঙ্গত কারণেই।
এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে কি আমাদের সবার ঘরণীই আলিমা হয়ে যাবেন? না, তা কখনই নয়। আল্লাহ সবাইকে সমান যোগ্যতা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠাননি। কিন্তু যাদের সেই যোগ্যতা আছে তাদেরকে কেন আমরা বঞ্চিত করছি? আর যারা ‘আলিমা হতে পারবেন না তারাতো নিদেনপক্ষে ইসলামিক এডুকেটর হতে পারবেন। আর এটুকু আমাদের স্ত্রীদের হতেই হবে কারণ, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘এডুকেট’ করার দায়িত্ব অনেকাংশেই কিন্তু তাদের উপর। এখন বিয়ের পর একজন স্ত্রী ‘আলিমা হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন নাকি প্রাথমিক পর্যায়ের একজন Islamic educator হয়েই দায়িত্ব আঞ্জাম দিবেন তা ঠিক করতে হবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে—
• নিজের সক্ষমতা
• অবসর সময়ের পরিমাণ
• বেটার হাফের সাপোর্ট
• ফ্যামিলি সাপোর্ট
• শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শ
এখানে ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই যে, সন্তানদের শিক্ষা ও দীক্ষায় বাবাদের কোন দায়িত্ব নেই। বাবাদের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না কিন্তু মায়েরা যদি তাদের দায়িত্ব ভুলে যায় কিংবা দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসে তবে বাবাদের একার পক্ষে একরকম অসম্ভব সেই দায়িত্ব পুরোপুরি আঞ্জাম দেওয়া।
এতটুকু পড়ে অনেকেই ভাবছেন হয়ত যে কীভাবে আমরা আমাদের ঘরণীদের দ্বীনি শিক্ষা ও তরবিয়তের ব্যবস্থা করব? বোনেরাও ভাবতে পারেন যে, এই অধম শুধু তাদের উদ্দেশ্যে বয়ান দিয়েই খালাস! কীভাবে বোনেরা বাসায় থেকে দ্বীনের জ্ঞানার্জন করবে আমি এখানে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করছি। তবে তার আগে মনে রাখতে হবে, যদি আমরা আমাদের স্ত্রীদেরকে সরাসরি কোন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন মাহরামের সাহায্যে পাঠিয়ে ‘আলিমাদের কাছ থেকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দিতে পারতাম তবে নিঃসন্দেহে সেটাই ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা অনেকটাই অসম্ভব, বিশেষত ঢাকা শহরের জ্যাম এড়িয়ে কোথাও যাওয়া-আসা মানেই একদিন শেষ। তাছাড়া বাচ্চাদের বাসায় রেখে যাওয়া থেকে শুরু করে মাহরাম ম্যানেজ করা পর্যন্ত সবকিছুই পারিবারিক বাস্তবতায় সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর একটা বাস্তবভিত্তিক সমাধান হতে পারে অনলাইনে আমাদের স্ত্রীদের দ্বীন শিক্ষার আয়োজন করা।
আমরা ও আমাদের স্ত্রীগণ এজন্য যা করতে পারি—
• আমাদের বাসায় যদি একটা কম্পিউটার এবং নেট সংযোগ থাকে তবে আমরা অনেকটাই চিন্তামুক্ত। আমাদের উচিত আমাদের আহলিয়াদের প্রথমেই আরবী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং এজন্য তাদেরকে জোর তাকিদ দেওয়া ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে বোনদের জন্য আরবী ভাষা ও দ্বীনের অন্যান্য শাখায় জ্ঞানার্জনের সুযোগ আছে। এই ধরনের কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা তাদেরকে ভর্তি করে দিতে পারি। তবে ভর্তির আগে অবশ্যই ভালমত জেনে নিতে হবে যে, ঐ প্রতিষ্ঠানের রুটিন ও সিলেবাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলা বোনদের পক্ষে সম্ভব হবে কি না। কারণ, তাদেরকে পড়ার সাথে সাংসারিক ব্যস্ততার একটার বোঝাপড়া সামলাতে হয়। অনলাইনে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে দ্বীন শিক্ষার সুযোগ আছে তার একটি লিঙ্ক। এখান থেকে আপনারা খুঁজে নিন আপনাদের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।
• আরবী ভাষা শেখার পাশাপাশি দ্বীনের একেবারে বেসিক ফিক্বহী আহকাম যেগুলো দৈনন্দিন জীবনে দরকার হয় সেগুলো প্রথমে শেখার দিকে নজর দেওয়া উচিত। পড়ার সময় প্রয়োজনীয় নোট টুকে রাখা ভাল যেন সেখান থেকে আমরা সন্তানদেরও শেখাতে পারি।
• আক্বীদা সংক্রান্ত অহেতুক তাত্ত্বিক মারপ্যাঁচ বর্জন করে একজন মুসলিমের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ-র পূর্ণাংগ পরিচয়, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, আখিরাত ও তাক্বদীর সংক্রান্ত আক্বীদা একেবারে পরিষ্কার থাকা এবং ইসলামের স্তম্ভগুলির পরিচয়, তাৎপর্য এবং ইসলাম ভঙ্গকারী প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
• আমরা বাসায় হাফেজা রেখে আমাদের স্ত্রীদের জন্য কুরআন হিফজের ব্যবস্থা করতে পারি—যদি তারা আগ্রহী হয়ে থাকে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু বের করতে পারে। পুরো কুরআন না পারলেও শেষ ৩ জুয মুখস্থ করার চেষ্টা করা উচিত। আর সেটুকুও কঠিন হলে একেবারে শেষ জুযটা (জুয আম্মা) অন্তত মুখস্থ করাই উচিত। আর এটুকু না পারার পেছনে কী অজুহাত থাকতে পারে? হাফেজা রাখা না গেলে অনলাইন হিফজুল কুরআন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। Islamic Online University (IOU) এর Global Quran Memorization এমনই একটি প্রোগ্রাম।
• সালাফদের জীবনী বেশি বেশি অধ্যয়ন করা জরুরী। বোনদের উচিত সালফে সালেহীন নারীগণের জীবনী অধিক পাঠ করা ও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা। দ্বীনের প্রতি সমস্ত কমিটমেন্ট ঠিক রেখেও কীভাবে তারা সন্তানদের তারবিয়াহ ও তাযকিয়াহর আঞ্জাম দিয়েছেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা এবং সেভাবে নিজেদের সন্তানদের তারবিয়াহ ও তাযকিয়াহর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
• খুব ভাল হয় যদি আমরা সন্তানদের নিয়ে দিনের/সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট সময়ে রুটিন করে বসি এবং আমাদের স্ত্রীগণ যা শিখবে আমরা তা সন্তানদের শেখাই। এতে সন্তানেরা একটা পড়াশোনার পরিবেশ ঘরের মধ্যে দেখতে পাবে এবং তারাও দ্বীন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তবে খুব ভালমত মাথায় গেঁথে নেওয়া দরকার যে, আমরা যেন দ্বীন শিক্ষার এই আসরটা যথাসম্ভব তাদের জন্য সহজ ও আনন্দময় করে তুলতে পারি। দ্বীন শেখাতে গিয়ে দ্বীনের প্রতি ভয়/বিদ্বেষ যেন তাদের মনে না ঢুকে যায়—সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
অন্তত এতটুকু ঠিক মত করতে পারলেই আশা করা যায় আমাদের স্ত্রীগণ ইসলামিক এডুকেটর হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারবেন এবং আমাদের সন্তানদের উপযুক্ত দ্বীনি শিক্ষার একটা সঠিক গাইডলাইন তারা নিজে থেকেই বুঝতে পারবেন।
আল্লাহু আ’লাম।
[৯]
সোশ্যাল মিডিয়ার এ যুগে (অধিকাংশ) মানুষ মাত্রই show off প্রবণ। নিজের/নিজেদের ভালোলাগা, ভালোবাসা, ভালো থাকা আমরা যেন অন্যকে জানানোর জন্য একপায়ে খাড়া। কথায় বলে—“কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।” আমাদের অবস্থাও তথৈবচ! যখন আমরা নিজেদের ‘বিন্দাস লাইফ’ মানুষের সাথে ‘share’ করতে ব্যস্ত তখনই হয়তবা আমাদের মতই আরেক সংসারে জ্বলছে অশান্তি কিংবা বিচ্ছেদের আগুন। অনেক সময়তো এও দেখা যায় যে, নিজেদের মধ্যেই ‘বনিবনা’ হচ্ছে না কিংবা তুষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরাই আবার নিজেদের happiness প্রচারে উচ্চকণ্ঠ। আসলে মানুষ যতই নিজেকে প্রবোধ দিক না কেন যে, ‘we are made for each other’—দুনিয়ায় এমন দুটি কোন মানুষ নেই যাদের মধ্যে ভালোলাগায়-পছন্দে-অপছন্দে কোনো না কোনো অমিল নেই।
একারণেই হয়তবা অনেক সাবধানী মানব-মানবী প্রশ্ন করে থাকেন, ‘যে মেয়েকে/ছেলেকে কখনও চিনলাম না, জানলাম না তার সাথে কীভাবে বাকি জীবন কাটাব?’ এই (কু)যুক্তির জবাব দেওয়া এই লিখার উদ্দেশ্য নয় বরং আজ আমি একটি উপায় বাতলে দিতে চাই যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে অনেক অনেক অমিল ও মতপার্থক্য থাকার পরেও নিজেদের মধ্যে একটা ভাললাগার মেলবন্ধন তৈরি করতে পারবেন, নিজেদের অপছন্দগুলিকে দূরে সরিয়ে পছন্দগুলি দিয়ে অবসর সময়ের পুষ্পমালা গাঁথতে পারবেন ইনশা আল্লাহ। আর এই সংক্রান্ত যে কথাগুলো এখন বলতে চাই সেগুলো কোনটাই বই-পুস্তক থেকে পড়া নয়, বরং আমার ও চারপাশের প্রিয়জনদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া।
নিজেদের অমিলগুলোকে দূরে সরিয়ে কাছে আসার জন্য সর্বপ্রথম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই বোঝাপড়ায় আসতে হবে যে, ‘আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তি শুধু মিলগুলিই নয় বরং আমাদের অমিল ও মতানৈক্যের কারণেও আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি।’ ব্যাপারটা এভাবে ভাবুন—যদি আপনাদের মধ্যে কোন অমিল না-ই থাকত এবং একজন আরেকজনের সব কিছুতেই হুঁ হাঁ করে যেতেন তবে বিষয়টা কেমন বোরিং হত! না থাকত কোন গঠনমূলক আলোচনা আর না আসত কোন সৃজনশীল কাজের ধারণা। তথাপি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতানৈক্যের কারণে অনেক পরিবারে কোন পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি গোলটেবিল বৈঠকও (মাশোয়ারা) করা হয়ে যায় আর সেখানে যদি আমরা আমাদের বুঝমান সন্তানদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি তবে তারাও পারিবারিক সিদ্ধান্তে মত দিতে পারে এবং এভাবে শৈশবকাল থেকেই তাদের ডিসিশন নেওয়ার সক্ষমতা গড়ে উঠে। এভাবে পারস্পরিক মতানৈক্যকে আমরা একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলেই কিন্তু বুঝতে পারি যে দাম্পত্য জীবনে মতানৈক্য আমাদের প্রতি আল্লাহর কত বড় একটি ইহসান। কিন্তু কষ্টের বিষয় হল এই ইহসানকেই আমরা জীবনসংগী/জীবনসঙ্গিনীর উপর যুলুমের হাতিয়ার ও অভিযোগের ধনুক হিসেবে ব্যবহার করি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে।
আচ্ছা ভাবুন তো, শুধু কি আলু-তেল-পেঁয়াজ নিয়ে ঝগড়া করার জন্য আল্লাহ দুটি অসাধারণ মানুষকে এক ডোরে বেঁধে দেন? নাকি তার চেয়েও বড় কিছু করার ক্ষমতা তাদের মাঝে আছে দেখেই আল্লাহ তাদেরকে একত্রিত করেছেন? বারান্দার লতানো গুল্ম যেমন যত্ন-আত্তি পেলে গ্রিল বেয়ে তরতর করে উঠে যায় তেমনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও একটা ভাল understanding থাকলে সেখানে ভালোবাসা-মায়া-মমতা-সহনশীলতা-শ্রদ্ধাবোধ তরতর করে বাড়তে থাকে।
তাহলে আমরা কী করতে পারি? স্বামী-স্ত্রী একত্রে অন্তত এমন একটি কাজ করুন যাতে আপনাদের দুজনেরই আগ্রহ আছে। যে দুটি মানুষ ২৪/৭ একসাথে একই ছাদের নীচে থাকেন তাদের মাঝে হাজার মতানৈক্য-অমিল থাকুক না কেন, এমন একটি বা দুটি কাজ খুঁজে পাওয়া মোটেও কঠিন হবে না যে কাজটায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আগ্রহ বোধ করেন। দুজনকেই সমান আগ্রহী হতে হবে এমন নয়। হতে পারে কাজটায় কেউ একটু বেশি আগ্রহী, কেউবা আরেকটু কম কিন্তু সারকথা হল—আগ্রহ থাকতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থেই সেই কাজে অংশগ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। কাজগুলো হতে পারে এমন—
- বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বাগান করা, যত ছোট পরিসরেই হোক না কেন কিংবা বাসায় একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী গড়ে তোলা। এই কাজগুলির একটি সুবিধা হল এগুলো শুধু ‘করেই খালাস’—বিষয়টা এমন না। একবার কোন বাগান এবং লাইব্রেরী তৈরি হয়ে গেলে নিয়মিত তার যত্ন করা, ঝাড়া-মোছা করা, নিত্য নতুন সদস্যদের (বই/গাছ) আসার ব্যবস্থা করা—এমন অনেক কাজই করা লাগে যা দাম্পত্য সম্পর্কে একটা long term project হিসেবে কাজ করে। ভালো করে খুঁজে দেখলে এমন অনেক কাজই পাওয়া যাবে যা কি না স্বামী-স্ত্রী একসাথে আনন্দ নিয়ে করতে পারে এবং কাজগুলোরও একটা পজিটিভ প্রভাব পরিবারে এবং নিজেদের মন-মননের উপর পড়ে।
- একসাথে কিছু শেখা। হতে পারে Skill Development মূলক কোন কোর্স কিংবা কোন ইসলামিক কোর্স। এখন Udemy, Coursera এসব প্ল্যাটফর্মে ঘরে বসেই অনেক ক্রিয়েটিভ কিছু শেখা একেবারেই সহজ, শুধু দরকার আগ্রহ আর সদিচ্ছা এবং একটুখানি সময় ‘কুরবানী’ করার মানসিকতা। আবার অনেক ইসলামিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে আরবী ভাষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইসলামিক টপিকের উপর কোর্স করা যায়। স্বামী-স্ত্রী একত্রে এমন কোন কোর্সে জয়েন করলে পড়ায় যেমন গতি থাকে তেমনি পড়ার মানও ভাল হয়। একজন আরেকজনকে একাডেমিক বিষয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি উৎসাহ—উদ্দীপনাও দিয়ে থাকে।
এই প্রসঙ্গে নিজের একটি অভিজ্ঞতা বলি—IOU তে আমি এবং আমার আহলিয়া একসাথে BAIS কোর্সে পড়েছি। এখানে ৪৮ টা কোর্সের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কোর্স ছিল—মীরাসের কোর্সটি। অর্থাৎ সম্পত্তি বণ্টনের নিয়মকানুন নিয়ে। আমার স্পষ্ট মনে আছে—জটিল গাণিতিক হিসাবের মারপ্যাঁচ আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকত না, কোর্সটির প্রায় পুরোটাই আমার আহলিয়া আমাকে পড়িয়েছে। দুজন একসাথে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি এবং ফলাফলও মন্দ ছিল না আলহামদুলিল্লাহ। IOU এর পুরো ৬ বছরের যাত্রায় এমন অসংখ্য স্মৃতি আছে আমাদের। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস—যেকোন স্বামী-স্ত্রীই যদি একসাথে গঠনমূলক কোন একাডেমিক প্রোগ্রামে জয়েন করেন তবে এতে শেখাও যেমন হয় তেমনি নিজেদের মাঝে রসায়নটাও আবার নতুন করে ঝালাই হয়ে যায়।
- একসাথে কিছু শেখানো। হয়ত ভ্রু কুঁচকে ভাবছেন—‘একসাথে আবার কী শেখাবো?’ যদি আপনি/আপনারা কিছুটা এক্সট্রোভার্ট স্বভাবের হয়ে থাকেন তবে এই কাজটা খুব সহজ। সপ্তাহের একদিন একটি নির্দিষ্ট সময় বিল্ডিং এর কিংবা পরিচিত সার্কেলের বাচ্চাদের বাসায় ইনভাইট করুন। তাদের সাথে খেলাচ্ছলে গঠনমূলক কোন স্কিল কিংবা আদব ও ইসলামী মূল্যবোধ শিক্ষা দিন। কী শেখাবেন, কীভাবে শেখাবেন এবং কতটুকু শেখাবেন—এসব কিছুই বাচ্চাদের ‘নেওয়ার ক্ষমতা’ এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে নির্ধারণ করুন। তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন—পুরো বিষয়টা যেন খেলার ছলেই হয় এবং এখানে স্কুল স্কুল ভাব না আসে। বাচ্চারা সারাটা সকাল-দুপুর স্কুল করে বাসায় এসে নিশ্চয়ই আবার স্কুলে যেতে চাইবে না! আর যেহেতু এই ধরনের কাজে বসায় স্পেস দরকার হয় এবং কিছুটা হৈ-চৈ হতে পারে তাই অবশ্যই আপনার বেটার হাফের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। সবকিছুর মূল উদ্দেশ্যই যেহেতু ‘একত্রে কিছু করা’, তাই কিছু করতে গিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করবেন না।
- সবচেয়ে ভাল হয় যদি পরস্পরের weak point সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকে এবং সেই weak point নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা থাকে। যেমন—যদি স্ত্রী আর্থিক হিসাব নিকাশ এবং ব্যাংক লেনদেন কিংবা money management ইত্যাদি কাজে কাঁচা হয়ে থাকে তবে স্বামী পারেন ধীরে ধীরে তাকে এসব কাজে দক্ষ করে তুলতে (এখানে ধরে নিচ্ছি যে স্বামী এসব কাজে পারদর্শী কারণ ছেলেদেরকে আর্থিক দায়িত্ব নেওয়ার সুবাদে প্রায়ই এসব করতে হয়) এতে করে স্ত্রীদের জন্য সংসারের হিসাব নিকাশে সুবিধা হতে পারে। আবার স্বামী যদি বাচ্চার যত্ন-আত্তি নিতে কিছুটা ‘কাঁচামি’ করেন তবে স্ত্রীর উচিত স্বামীকে এইদিকে এগিয়ে দেওয়া। আফটার অল, বাচ্চাটাতো আর মায়ের একার না!
- স্বামী-স্ত্রী একত্রে যদি ভলান্টারি কাজ করা যায় তবে সেটা একেবারে সোনায় সোহাগা। হতে পারে কোন সেমিনার/কনফারেন্স/স্কলারদের হালাকা আয়োজনে কাজ করা কিংবা বাচ্চাদের নিয়ে কোন প্যারেন্টিং প্রোজেক্টে কাজ করা। এই ধরনের কাজে একসাথে অনেকগুলো skill ডেভেলপ করে। আর তারচেয়ে বড় কথা হল, এই ধরনের কাজে দু’জন একসাথে যুক্ত হলে একজনের কাছে অন্যজনের অনেক hidden talent চোখে পড়ে যা হয়ত সাংসারিক ‘ক্যাচক্যাচানি’র চাপে দুজন ভুলেই গিয়েছিল কিংবা কখনও চোখ মেলে দেখারও সুযোগ হয়নি। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে করলে তারাও ছোট থেকেই এই skill গুলোর সাথে পরিচিত হতে থাকে এবং তাদের নিজেদের অজান্তেই এগলো adopt করতে শুরু করে। এই ধরনের কাজ যে সবসময় ঘরের বাইরেই করতে হবে তা জরুরি না। ঘরে থেকেও বাচ্চাদের নিয়ে অথবা বাচ্চাদের ছাড়াও এমন কাজ করার সুযোগ আছে।
- স্বামী-স্ত্রীর একত্রে যদি দ্বীন প্রচারের কাজ করা যায় তবে সম্ভবত এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না। তবে এখানে অবশ্যই শার’ঈ নীতিমালা মেনেই কাজ করতে হবে। এই কাজের জন্য প্রচলিত কোন দাওয়াতী মেহনতের সাথে যুক্ত হতেই হবে এমন না। আবার দম্পতিদের মধ্যে কেউ একজন এমন কোন মেহনতে আগে থেকেই জুড়ে থাকলে আরেকজনের জন্য সহজ হয়ে যায় দাওয়াতের প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাওয়াটা। তবে অন্তত নিজ নিজ পরিসরে এবং পরিচিতজনদের মাঝে দাওয়াতী কাজে সময় দিলে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও রহমত নেমে আসে। মেয়েরা সহজেই পারেন নিজেদের বিল্ডিং-এর অন্যান্য মহিলাদের মাঝে প্রয়োজনীয় (তাদের মেজাজ ও নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে) ইসলামী বই গিফট দেওয়া কিংবা বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে অন্যান্য ‘ভাবী’দের সাথে খেজুরে আলাপ না করে সুযোগ বুঝে দ্বীনের কথা বলা, গীবতের ঘ্রাণ পেলেই গীবতের ভয়াবহতা নিয়ে আলাপ শুরু করা, কীভাবে নিজেদের পরিবারে দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহর বারাকাহ ও সুকুন (প্রশান্তি) নেমে এসেছে সেই গল্প শোনানো। এই কাজগুলি কম-বেশি সকল স্ত্রীগণই করতে পারেন। আর স্বামীদের জন্যতো দাওয়াতের ক্ষেত্র অনেক প্রশস্ত—সেই আলোচনা এখন নিষ্প্রয়োজন।
- সকল কাজই যে long term বেসিসে হতে হবে তা নয়। এমন অনেক ছোট ছোট কাজ রয়েছে যেগুলো নিয়মিত করলেও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অমত ও অমিলের জায়গাগুলোতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা সম্ভব হয় । দুজন একসাথে বাইরে খেতে যাওয়া কিংবা ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে যাওয়া (কাছে বা দূরে, পাহাড়ে বা সমুদ্রে…), একসাথে morning/evening walk এ যাওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া কিংবা নিদেনপক্ষে ছুটির দিনে দুজনে মিলে প্রিয় কোন খাবার রান্না করা। মনে রাখতে হবে, এসব কাজের কোনটিতে হয়ত একজনের আগ্রহ কম থাকবে কিংবা একেবারেই থাকবে না; কিন্তু তাই বলে বাদ দেওয়া যাবে না। নিজেদের স্বার্থেই নিজের উপর তার পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়াটা শিখতেই হবে।
এখানে আমি একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। আপনারা নিজেরাই খুঁজে নিন আর কী কী কাজ আপনারা অবসরে করতে পারেন যা কি না শত অমিল-দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও আপনাদেরকে ভালোবাসার বাহুডোরে বেঁধে রাখবে। আর হ্যাঁ, যত যা-ই করুন না কেন, আল্লাহর কাছে আপনাদের মিল-মহব্বত-জোড়ের জন্য কক্ষণো দুয়া করতে ভুলবেন না, কক্ষণো না।