প্রায় সময়েই খুব মন খারাপ আমাকে আঁকড়ে ধরতে নেয়…
যখন আমারই চারপাশের কাছের মানুষদের মাঝে প্রায় সবাইকেই দেখি জাগতিক আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক দিক থেকে এবং আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও উন্নতি করেই চলেছে ক্রমশ, অথচ আমি যেন ঠিক আগের জায়গাটাতেই আঁটকে আছি — উন্নতির নামগন্ধও নেই। এত চেষ্টা করি তবু যেন বারবার পা পিছলে পড়ি সবধরনের প্রচেষ্টাতেই!
তখন খেয়াল হয়, আরো শত-সহস্রজন মানুষের চাইতে বেশি নিয়ামাত আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, যা পেয়েছি, তার হিসেবটুকুই কি দিতে পারবো? এটুকুও না থাকতে পারতো, এই শারীরিক অসুস্থতাটুকুই তো তাঁর ইচ্ছাতে শতগুণ বেড়ে যেতেই পারে, তখন হয়ত স্বাভাবিক চলাচলের যোগ্যতা দূরে থাক, কীবোর্ড চাপার মতন শক্তিও থাকবে না। এই জগতের হাজার হাজার নিয়ামাত আমি পেয়েছি একদমই বিনামূল্য, বিনা পরিশ্রমে… তবু কতই না অপ্রাপ্তি আমার!
আলহামদুলিল্লাহ জীবনে যা যা পেয়েছি, যেমন আছি, তা তো অনেক! হয়ত একদিন সবাইই আমাকে ছেড়ে যাবে, অথবা একদিন আমাকেই ছেড়ে চলে যেতে হবে। শেষমেষ কেবল আমিই থাকবো। চারপাশের মানুষগুলোকে যা দিতে পারবো, তাইই কেবল আমার হয়ে জমা হবে। আর যতখানি চেয়ে নিতে পারবো নিজের জন্য মহান আল্লাহর দয়া আর ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে..
যারা বাসায় ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে, কম্পিউটার খুলে, ইন্টারনেট কানেকশন অ্যাকটিভেট করে, ফেসবুকে ঢুকে তারপর এই স্ট্যাটাস পড়তে পারছি — তারা কি দুর্ভাগা বা অনেক দুখী হতে পারেন আদৌ?
এই দেশে কোটি কোটি মানুষের তো ক্ষুধা নিবারণের জন্য কাজের প্রচেষ্টার পরে একবেলা ফ্রি সময় থাকেনা, কম্পিউটার কেনার যোগ্যতা নেই, তাকে আবার চালানো শেখা, ইন্টারনেট কানেকশন নেয়া, সর্বোপরি বাংলা দেখার মতন কসরত করা… এই বিলাসিতার সুযোগ নেই কোটি কোটি বাংলাদেশীরই। পৃথিবীর মানুষদের হিসাবের কথা বাদ থাক।
আল্লাহ আমাদের অনেক ভালো রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ। অন্ততঃ অনেক কিছু পেয়েছি তা নিশ্চিত। কিছু পরীক্ষা আছে সবার জীবনে — সেটা থাকবেই কারণ জীবনের এই জটিলতা আর কঠিন সময়গুলোর বিপরীতে আমাদের রেসপন্সের উপর ভিত্তি করেই আমাদের অনন্তের জীবনের হিসেব। আর মাথায় রাখা দরকার, আল্লাহ কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না; সুতরাং, আমরা সমস্যায় থাকলে অবশ্যই তা কাটিয়ে উঠতে পারব। যদি আমরা কৃতজ্ঞ হই, আল্লাহ তার নিয়ামাত আরো বাড়িয়ে দেবেন আমাদের প্রতি।
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না”। [সূরা বাকারাহঃ ১৫২]
“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে….”। [সূরা বাকারাহঃ ২৮৬]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের কী জানিয়ে দিয়েছেন, তা আরেকবার স্মরণ করে নিই…
- “….যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহিম ৩৪]
- “বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।” [সূরা আ’লা:১৬-১৭]
- “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।” [সূরা আ’লা ১৪-১৫]
- “…নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।” [সূরা গাফির – ৬১]
- “হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” [সূরা বাকারা ১৫৩]
- “সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” [সূরা বাকারা ১৫২]
- “… আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়”। [আল ইমরান ১৮৫]”
- “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।…” [সূরা গাফির – ৬০]
- “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তিলাভ করে;জেনে রাখ,আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়” [আর-রাদঃ ২৮]