[১]
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘোনাটলা গ্রাম। আব্দুল লতিফ সেখানে কেমিস্ট্রি পড়ান। সবাই তাকে বেশ সমীহের নজরে দেখে। শ্রদ্ধা করে। আলোকিত মানুষ মনে করে। তবে কেউ জানতো না, আলোর অপর পাশেই ছিল ঘোর অন্ধকার।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশায় দুইজন ছাত্রী ব্যাচ করে তার কাছে পড়তো। একদিন একজন পড়তে না আসায় অপরজন একাই পড়তে যায়। শিক্ষকের কাছেই তো যাচ্ছে। সবাই বলে, ‘শিক্ষক হচ্ছে পিতার সমতুল্য।’ বাসায় গিয়ে পানি চাইলে আব্দুল লতিফ ছাত্রীকে এক গ্লাস পানি দিলেন। কিন্তু পানির সাথে মিশিয়ে দিলেন কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে ছাত্রী।
যখন জ্ঞান ফেরে তখন তার গায়ে একটি সুতোও নেই। সম্পূর্ণ নগ্ন দেহের উপর তার পিতৃতুল্য(!) শিক্ষকের মুখ বন্য জন্তুর মতো ঘুরছে। চিৎকার করার চেষ্টা করতেই আব্দুল লতিফ কৌশলে তাকে থামিয়ে দেয়। আর কম বয়সী একটা মেয়েকে বিবস্ত্র অবস্থায় সবাই দেখলে পুরো গ্রামে কী প্রতিক্রিয়া হবে তা বুঝতে পারাও ঐ ছাত্রীর জন্য কঠিন কিছু ছিল না। সে চুপ হয়ে গেলো। ভাবল, গেলে তো সতীত্বটাই গিয়েছে। কিন্তু উচ্চবাচ্য করলে তো আর লোকসমাজে মুখ দেখানো যাবে না।
তবে চুপ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। কিছুদিন পর জানা গেলো, রুমের মধ্যে হাই কোয়ালিটির ক্যামেরার সাহায্যে আব্দুল লতিফ তার ছাত্রীর ইজ্জতহানির দৃশ্যটা ভিডিও করেছিল। ঐ ভিডিও সিডি করে সে বাজারে ও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে। নগ্ন এক মেয়ের অচেতন অবস্থায় হাত-পা নাড়ানোটা হয়তো অনেকের কাছে আবেদনময়ী লেগেছে। তাই বহু ছেলে সে ভিডিও দেখতে প্রলুব্ধ হয়। ‘আমি কারো ক্ষতি করছি না’—এই যুক্তি দেখিয়ে এসব ভিডিও দেখা ছেলেরা জানতে পারলো না, সে ভিডিওতে এক নারীর কান্না মিশে রয়েছে। তারা জানার চেষ্টাও করল না, তাদের একটা ক্লিকে এমন বহু নারীদের জন্য একই পরিণতি সৃষ্টির পথ তৈরি হয়েছে।
ঐ ছাত্রী ছিল বিবাহিত। স্বামী লোকলজ্জায় তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। তার আশ্রয় হয় বাবার বাড়িতে। সেখানেও কলঙ্ক তাকে পিছু ছাড়ে না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে সে এক আত্নীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
[সুত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৩ শে অক্টোবর, ২০১০]
রাসূল (সা) বলেছেন, “কোন পুরুষই মাহরাম ছাড়া কোন নারীর সাথে একা থাকবে না।”
[সহীহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ১৩৪১]
[২]
বাবার কাছে জন্মদিনে একটা সাইকেল আবদার করেছে পাঁচ বছরের শিশু সামিউল। বাবা তাকে সাইকেল দিয়েছিলেন কীনা তা বলার আগে আরেকটি গল্প বলে নেই।
সাথী আর আরিফের প্রেম দেড় বছর ধরে। মোবাইলেই পরিচয়। তারপর শাহবাগ মোড়ে দেখা। কিন্তু একি! মোবাইলে আরিফের কণ্ঠ সুন্দর হলেও বাস্তবে সে একটুও সুন্দর না। বাসায় ফেরে তাই সাথী অনেকক্ষণ কাঁদল। তবে মন যাকে দিয়েছে, তাকেই সে বিয়ে করবে। আগে এক জায়গায় বিয়ে হবার পর ডিভোর্স হয়েছে, সাথীর এমন অতীত জেনেও তাকে বিয়ে করতে রাজী হয় আরিফ। কিন্তু বিয়ের পর সাথী তার এই উদারতার রহস্য ধরতে পারে। আরিফ নিজেও যে বিবাহিত। তার একটা স্ত্রীও রয়েছে। কিন্তু এ কথা সে সাথীর কাছে গোপন করেছিল। তবুও সবকিছু মেনে নেয় সাথী। স্বপ্ন দেখে নতুন ভবিষ্যতের।
কিন্তু দুঃস্বপ্ন তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। প্রথম স্ত্রীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে আরিফ আর সাথী ঠিকানা বদল করতে থাকে। স্ত্রীর সাথে আইনি লড়াইয়ে আরিফ আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই তাকে সাপোর্ট দিয়ে ফ্যাশন-সচেতন সাথী একটা বিউটি-পার্লার খুলে ফেলে। যে আয় আসে তাতে বেশ ভালোই সংসার চলে যায়।
সাথীর বিউটি পার্লারে রেগুলার কাস্টমার হচ্ছে এশা। বড় লোকের স্ত্রী। দু’হাত দিয়ে টাকা খরচ করে সে। ধীরে ধীরে সাথী আর এশার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। একজন আরেকজনের সাথে কথা শেয়ার করে। সাথী রসিয়ে রসিয়ে তার স্বামী বিশেষ মুহূর্তে কী কী করতে পারতো তা বান্ধবীকে বলতো। সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করতো, খুব অশ্লীল কথাও এশা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে। তবে এটা জানতো না যে, নিজের পায়ে সে নিজেই কুড়াল মারছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে এশার স্বামী অক্ষম একজন পুরুষ। তাই সাথীর মুখে আরিফের পৌরুষের গল্প শুনে সে আরিফের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আরিফও সে আহ্বানে সাড়া দেয়। ভুলে যায় তার সাবেক প্রেমিকার কথা, স্ত্রীর কথা। তার দুই সন্তানের মা সাথীর কথা।
নিজের স্বামীকে যতোভাবে ফেরানো যায় সাথী তার সবই করতে থাকে। স্বামীকে কুরআন হাতে নিয়ে শপথ করায়। এশার স্বামীকে জানায়। এশার সাথে চুলোচুলি করে। এমনকি রেডিও আমার প্রোগ্রামে এসে কাঁদতে কাঁদতে নিজ স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে এশাকে অনুরোধ করে। নিজে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, শ্রোতাদেরকেও কাঁদাতে থাকে। কোথায় যেন সাথী শুনতে পারলো, এশা ইয়াবা খায়। আর ইয়াবা খেলে মেয়েরা সুন্দরী হয়ে যায়। শেষে স্বামীকে ফিরে পেতে সে ইয়াবাও ধরলো।
একসময় তার পাগলের মতো অবস্থা হলো। ইয়াবা খেয়ে সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো। পথচারীদের থামিয়ে জিজ্ঞেস করতো, “ভাই বলেন! আমি কি দেখতে কম সুন্দরী?” এতো চেষ্টার পরেও স্বামীকে থামাতে পারেনি সে। ঠিকই আরিফ এশার সাথে দেখা করতে চলে যেতো।
শুরুতে সামিউলের কথা বলেছিলাম, মনে আছে? বাবার কাছে সে সাইকেল আবদার করেছিল? এই সামিউল হচ্ছে এশার একমাত্র পাঁচ বছরের ছেলে। একদিন মাকে অন্য এক পুরুষের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে সে। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। যাতে কাউকে না বলতে পারে, এ জন্য আরিফ আর নিজ মা এশাই সামিউলকে খুন করে। নবোদয় হাউজিং-এর একটি প্লটে লাশ পাওয়া যায় সামিউলের।
সামিউলের জীবনে সবচেয়ে অপ্রাপ্তি হয়তো হয়ে থাকবে ছোট্ট সাইকেলটা না পাওয়া। একটি শিশুর জন্য খেলনার চেয়ে আর প্রিয় বস্তু কী বা হতে পারে?
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ) বলেন, “খুনের পর জিনার চেয়ে বড় কোন পাপ আছে বলে আমার জানা নেই।”
[শরহুল দালীল, ২/৩৬৫]
রাসূল (সা) বলেন, “কোন পুরুষ কি বলবে তার স্ত্রীর সাথে সে কী করেছে? কোন নারী কি বলবে সে তার স্বামীর সাথে কী করেছে?” একজন বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের নারী-পুরুষরা তো এসব বলে থাকে।” রাসূল (সা) বললেন, “এমনটা করো না। এটা অনেকটা এমন যে, এক পুরুষ শয়তান আর মহিলা শয়তান দেখা করলো। তারপর রাস্তার মধ্যেই তারা মিলিত হলো। আর লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখলো।”
[আদাবুজ জিফাফ, পৃঃ১৪৩]
[৩]
রংপুর থেকে স্বামীর সাথে দেখা করতে ঢাকায় এলেন নাফিদা। স্বামী মুয়াজ্জিন। ব্যস্ত মানুষ। দিনে পাঁচবার আজান দিতে হয় তাকে। বিদায়ের বেলা স্ত্রীকে সঙ্গ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না তার। তাই গাবতলীতে এক বাসে উঠিয়ে দিলেন স্ত্রীকে। হেলপার আর ড্রাইভারকে বারবার স্ত্রীকে সঠিক জায়গায় নামিয়ে দিতে অনুরোধ করলেন।
কিন্তু মুয়াজ্জিন হওয়ার পরেও তিনি রাসূল (সা)-এর সতর্কবার্তার কথা ভুলে গেলেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকে তুলে দিলেন কিছু হায়েনার কাছে। ড্রাইভার সুবিধামত জায়গায় গাড়ি থামালো। তারপর তিনজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করলো নাফিদাকে। ধর্মীয় অনুশাসনে বড়ো হয়েছে নাফিদা। স্বামী আর মাহরাম ছাড়া কেউই তাকে কখনো দেখেনি। কিন্তু আজ স্বামীর সামান্য ভুলে তাকে বিবস্ত্র হতে হয়েছে একদল বুনো শকুনের সামনে। যারা তাকে খাবলে খাবলে খেয়েছে।
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে নারী আল্লাহ্ ও শেষ দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ না করে।”
[সহীহ বুখারি, হাদীস নংঃ ১০৮৮]
[৪]
গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার একটি গ্রাম। এখানে বেশ প্রাচীন একটি প্রাইমারি ও হাইস্কুল রয়েছে। সে স্কুলের ক্লাস এইটে পড়ে কনা। বাবা বিদেশে থাকে। মা আর নানার সাথে থাকে সে। বান্ধবীরা হঠাৎ করে লক্ষ্য করলো, তাদের সই হুট করে মোটা হয়ে যাচ্ছে। সখীরা মজা করে বলতো, “ঐ ভোটকা! কী চালের ভাত খাস বল তো তুই!” কনা জবাব দেয় না। কষ্টের হাসি হাসে।
হঠাৎ করেই কনা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনকি বাসার বাইরেও যায় না। প্রতিবেশীরা কনাদের বাসায় গেলে কনার মা খুব অস্বস্তিতে ভোগেন। দ্রুত বিদায় করে দেন। গেটে সবসময় বড় সাইজের তালা লাগানো থাকে। একদিন প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে শুনলো, কনাদের বাসা থেকে ছোট্ট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসছে। ঘরে ঢুকে সবাই অবাক হয়ে দেখলো সদ্য জন্ম নেয়া একটা ছেলেকে ড্রামের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। এ বাসায় এ শিশু কোথা থেকে আসল? কিছুক্ষণ জেরার পর আসল তথ্য বেরিয়ে আসলো।
এ সন্তান কনার। আর সন্তানের পিতা কে? উত্তর শুনে একেবারে পাষাণ লোকও পিলে চমকে উঠলো। কনার নানা! একদিন নাতনীকে ঘুরতে নেয়ার নাম করে এ সর্বনাশ করে সে। কনার মা আহাজারি করতে করতে বলে, “হায়! আমার এ কী হলো! কনা আমাকে শুরুতেই বলেছিলো, ‘মা! নানা যেন আমার সাথে কেমন কেমন করে।’ আমি বলতাম, ‘আরে নানা মানুষ! একটু আকটু ইয়ার্কি তো করবেই।’
আজ পুরো সমাজে কনা আর তার মা অবাঞ্ছিত। এ এক কুৎসিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাবা হয়েছে জামাই, মেয়ে হয়েছে শ্বাশুড়ি!
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মাহরামের সঙ্গে পাপে লিপ্ত হয়, তাকে হত্যা করো।”
[মুস্তাতাদরাক হাকিম, হাদিস নংঃ ৮০৫৪]
(এখন কি এ বিধানটা অমানবিক মনে হচ্ছে?)
[৫]
মুদি ব্যবসায়ী ফারুক গাজীর স্ত্রী ইয়াসমিন তমা (২৭)। সাড়ে তিন বছরের ফুটফুটে কন্যা তানহাকে নিয়ে তাদের সংসার। খুব ধনী না হলেও তারা অসচ্ছল নন। তারপরেও কীসের জন্য প্রতিবেশী রেজার সাথে তমা পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়ে, তা সেইই ভালো বলতে পারে। স্বামী বুঝতে পেরে ধমক দিয়ে স্ত্রীকে থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু এতে উল্টো ফল হলো।
তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে রেজার হাত ধরে পালালো তমা। খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে রাজুর ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ওঠে তমা। রাজু তার পরিচয় দেয় নিজের বোন হিসেবে, যার স্বামী বিদেশে থাকে। কিন্তু এদিকে আসল স্বামী তাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। রাজুকে নিয়ে দিন ভালোই যায় তমার। প্রেম সাগরে দুজন হারিয়ে যায়। তবে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে তাদের জন্য পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় চার বছর ছুঁই ছুঁই করা তানহা।
নিজ মা-ই এ সমস্যার সমাধান করলেন। পেটের কন্যাকে খুন করলেন। এবার লাশটা নিয়ে কী করা যায়? বারান্দার জানালা দিয়ে লাশ বাইরে ছুঁড়ে ফেলল তারা। কিন্তু জানালার গ্রীলে লাশ আটকে গেলো। বোকা গ্রীল মিস্ত্রী জানতো না, এই গ্রীল দিয়ে এক মা তার সন্তানের লাশকে ছুঁড়ে মারবে। জানলে হয়তো, আরেকটু বড়ো করে গ্রীল বানাতো। এদিকে গ্রীল থেকে তানহার লাশ বেরও করা যাচ্ছে না। দুজন মিলে তখন মাথা বাদে তানহার দেহের বাকি অংশ বটি দিয়ে কেটে ফেললো। এরপর বাকি অংশ ছুঁড়ে ফেলল বাইরে।
কিন্তু তীব্র গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীদের কাছে ধরা পড়ে যায় তমা। অনেকভাবে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। কখনো বলেছে, এটা পচা হাঁস, সে বাইরে ফেলে দিয়েছে। কখনো বলেছে, এটা হচ্ছে মরা ইঁদুরের গন্ধ। যে কন্যাকে গর্ভধারণ করেছিল, তাকে পচা হাঁস, ইঁদুর বানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। রাজু তো আগেভাগেই পালিয়েছিল। তমাকে রক্ষার চেষ্টাও করেনি সে। যে সম্পর্কের শুরু এমন অন্ধকারে তার অস্তিত্ব তো এমন দুর্বল হবেই।
[সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ, ৫ ই আগষ্ট, ২০১০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) একদিন রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, “সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি?”
রাসূল (সা) বললেন, “যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা।”
- “তারপর?”
- “দারিদ্র্যের ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা।”
- “তারপর?”
- “প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।”
[আবু দাউদ, হাদীস নংঃ২৬২]
[৬]
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করা হলো বোরখাকে। কয়েকজন ছাত্রী বোরখা পরে ক্লাস করতে আসলে তাদেরকে গেটের ভেতরেই প্রবেশ করতে দেয়া হলো না। অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার গোলাম হোসেন বলেন, “স্কুলের একটি ড্রেসকোড আছে। এটি সবাইকে মানতে হবে।”
‘পর্দার বিরুদ্ধে কেন দাঁড়িয়েছেন?’—এ কথা জিজ্ঞেস করা হলে অধ্যক্ষ জবাব দেন, “পর্দার বিরুদ্ধে যাবো কেন? আমি হাজি সাহেব মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ি। বাড়িতে মেয়েরা বোরখা পরিধান করে।”
তার দাবী অনুযায়ী, নিজ বাড়িতে যে ড্রেসকোড তিনি চালু রেখেছিলেন, সেই ড্রেসকোডই স্কুলে এলে তিনি বলেছেন অড বা দৃষ্টিকটু ড্রেস। এই স্কুলেই যখন আমাদেরই এক বোনের নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা ঐ প্রিন্সিপালের নিকট কতোটুকু দৃষ্টিমধুর লেগেছিল, তা অবশ্য জানা যায়নি।
এই রাজধানীরই একটা স্কুল থেকে উঠে এসেছিল পরিমল। ছাত্রীর সাথে অপকর্ম করে যে বাধ্য হয়েছিল সে স্কুল ত্যাগ করতে। ভিকারুননেসার প্রিন্সিপাল ও প্রধানমন্ত্রীর কথিত বান্ধবী হোসনে আরার গুডবুকে ছিল সে। তাই এক জায়গায় চাকরী হারালেও ভিকারুননেসায় ঠিকই চাকরী পেয়ে যায় সে। কিন্তু ওর স্বভাব বদলায় না।
২০১৩ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার সাবেক এক ছাত্রী পরিমল সম্পর্কে বলে, ‘পরের মাসে ১৭ জুন স্যার কোচিংয়ে একা পেয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে আবারও ধর্ষণ করেন। ১৯ জুন স্কুলে গেলে স্যার দপ্তরিকে দিয়ে আমাকে টিচার্স রুমে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর ১০০ টাকা দিয়ে বলে পিল খেয়ে নিস।’
আদালতে ওই ছাত্রী বলে, ‘পরিমল স্যারের কাছে আমি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের কোচিং করতাম। ২০১১ সালের ২৮ মে আমার কোচিংয়ে যেতে দেরি হয়। ওই দিন স্যার তিনটি চ্যাপ্টার পড়ায়। আমি শেষ চ্যাপ্টারটি পাই। পড়া শেষে স্যার বলে, তুমি বস। ওই দুটি চ্যাপ্টার তোমাকে আলাদা করে পড়িয়ে দেব। এরপর সবাই চলে গেলে পড়ানোর একপর্যায়ে সে হঠাৎ ওড়না কেড়ে নিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে। ধস্তাধস্তি করে আমাকে বেঞ্চ থেকে মেঝেতে ফেলে দেয়। জোর করে আমাকে বিবস্ত্র করে। এরপর মোবাইল ফোনে ছবি তোলে ও প্রথম দফায় ধর্ষণ করে।’
‘ধর্ষণের পর স্যার বলে, ঠিকমতো পড়াশোনা করো। এ ঘটনা কাউকে বলো না। বললে ইন্টারনেটে তোমার ছবি ছেড়ে দেব। আমার কিছুই হবে না; বরং তোমারই ক্ষতি ও বদনাম হবে। লজ্জা ও ভয়ে আব্বু-আম্মুকে কিছু বলিনি। কোচিংয়ে পড়া চালিয়ে গেছি।”
মামলাটিতে ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। কতোজন লজ্জায় সাক্ষ্য দিতে পারেনি তা কে জানে? [সূত্রঃ Ntv, ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫]
কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে, সে সময়ে প্রিন্সিপাল হোসনে আরা পরিমলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আন্দোলনরত অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “এটা রেইপ না। এটা ছিল মিউচুয়াল সেক্স। আপনারা আসলে বেশি কঞ্জারভেটিভ।”
“কোন পুরুষের জন্য সরাসরি কোন মেয়েকে শিক্ষা দেয়া বৈধ না। এটা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর ফল হতে পারে খুবই ভয়াবহ।”
[ফতওয়াউল লাজনাহ, ১২/১৪৯]
আবু বকর সিরাজীর ‘মুক্তবাসিনী’ বইটি থেকে এ ছয়টি ঘটনা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাই বাস্তব। প্রায় ছয়শ পৃষ্ঠার দুই খণ্ডের এই বইতে তিনি এমন অসংখ্য ঘটনা নিয়ে এনেছেন। একেবারে পাষাণ মনের মানুষও সে গল্পগুলো পড়লে কেঁদে ফেলবে। নির্যাতিত মানুষগুলোর জন্য তাদের বুকে হাহাকার সৃষ্টি হবে।
বিংশ শতাব্দীর নারী জাগরণের তথাকথিত অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ‘অবরোধবাসিনী’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ঘরে বন্দী নারীদের বাইরে আনতে। এ আন্দোলনের বাহ্যিক ফলাফলে অনেকে খুশি হয়েছিলেন। এখন ‘সভ্যতার দুই চাকা’-ই ঘুরছে। ইউরোপিয়ানদের ছোঁয়া তো কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কিন্তু বেগম রোকেয়া কি মুদ্রার অপর পিঠটা দেখেছিলেন? উপরের ছয়টি গল্প থেকে চাইলে খুব সহজেই সব দোষ পুরুষদের ঘাড়ে চাপানো যায়। কেউ বলবে, ‘ভালোমত বিচার করা হলেই এসব দূর হয়ে যাবে।’ কিন্তু একজন আব্দুল লতিফ কিংবা পরিমলের বিচার কি সেই ছাত্রীগুলোর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? কেউ এক ধাপ এগিয়ে হয়তো বলবে, ‘বোরখা পরেও মেয়েরা ধর্ষিত হয়। এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। দরকার হচ্ছে যুগের সাথে তাল মেলানো।’ এ কথার সাথেও বহু মানুষ তাল মেলাবে। আর আমরা যতোই বুঝানোর চেষ্টা করি না কেন, তা তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু ব্যাংক থেকেও তো মাঝে মাঝে ডাকতি হয়। তাই বলে কোন পাগলে তার সম্পদ ব্যাংকে না রেখে রাস্তায় ফেলে রাখে? একইকথা এখানেও খাটে। পৃথিবীতে ঘটা প্রতিটা অনাচার বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব, এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী ছিলাম। আল্লাহ্ তায়ালা রাহমানুর রাহীম বলেই এখনো আমাদেরকে জমীনে গেঁড়ে দেননি।
‘কাছে আসার গল্প’-গুলোতে কী দেখানো হয়? দেখানো হয় কাছে আসার আনন্দ। আর কষ্ট যদি দেখানোও হয় সেটা বড়জোর বিরহের কষ্ট। কিন্তু কাছে আসার নাম করে কতো তানহার লাশ গ্রীলে আটকে যাচ্ছে, কতো সামিউল একটি সাইকেলের হাহাকারে এই পৃথিবী ত্যাগ করেছে তা কি আমাদের নির্লজ্জ মিডিয়া কখনো দেখিয়েছে?
আমাদের দেশের সমাজবিজ্ঞানীরা আজ বলেন, “স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক—দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে।” [সূত্রঃ Ntv, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬]
প্রথম আলোর মত প্রভাবশালী পত্রিকা বদলে যাওয়ার গল্প প্রচারের শ্লোগান নিয়ে লেখে, “বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরপুরুষের মেলামেশা (এ দেশে) সহজভাবে দেখা হয় না। এর মূলে রয়েছে কুসংস্কার, অনগ্রসরতা, অশিক্ষা এবং সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত বিদ্বেষ। নারীকে মানুষ হিসেবে না দেখতে পারার যে সীমাবদ্ধতা, সেখান থেকেই এই অনাচার গড়ে উঠেছে।” [সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২]
অথচ এই ‘অনাচার’-ই আজ পর্যন্ত আমাদের পরিবার-ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। ইউরোপের মতো ভেঙ্গে যেতে দেয়নি। মতিউর রহমানের মত লোকেরা যখন অনাচার দূর করার নামে সবচেয়ে বড় অনাচারকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন, তখন আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের এই কথাগুলো ঠিক কতোগুলো মানুষকে ভাবাবে, নিজের ভুলটা বুঝতে শিখাবে তা আমার জানা নেই।
রাসূল (সা) বলেছিলেন, “মুত্তাকীরাই আমার সবচেয়ে আপন। চাই সে যে হোক আর যেখানেরই হোক।” আল্লাহ্ তায়ালা যাতে আমাদেরকে তাঁকে ভয় করার তৌফিক দেন, যেভাবে তাঁকে আসলেই ভয় করা উচিত। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বোনদের মধ্যে এই বুঝটা এনে দিন যে, তিনি তাদের আদমের ‘সঙ্গী’ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে ‘ওয়ার্কার’ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য নয়। বুনো হায়েনাদের কাছে লাঞ্ছিত হবার জন্য নয়।
আমার বিশ্বাস, আমার বোনেরা যুক্তি ও বাস্তবতার শত ফাঁদ পেরিয়ে একদিন সত্যিকারের ইসলামকে বুঝতে শিখবেন। তারা একদম নিরুপায় না হলে, এই ঘুণে ধরা সমাজের বাইরে এসে নিজেকে কলুষিত করার ঝুঁকি নিবেন না। এই বোধটা তাদের মধ্যে আনবেন—
“সত্যিকারের সুখ ‘অবরোধবাসিনী’-তেই। ‘মুক্তবাসিনী’-তে নয়”